হিমশীতল রাতে সুরের মূর্ছনা
পৌষ পেরিয়ে মাঘ আসি আসি করছে। ঘন কুয়াশায় মুড়িয়ে আছে চারপাশ। সূর্যের অনুপস্থিতিতে শীত যেন আরও কনকনে হাড় কাঁপানো হয়ে উঠেছে। এমনই এক হিমশীতল রাতে ঝংকার উঠেছে হারমোনিয়াম, তবলা, তানপুরায়। শাস্ত্রীয় সংগীতের সুর ছড়িয়ে পড়েছে পৌষের বাতাসে। সুরের মূর্ছনায় দুলে উঠছে মনপ্রাণ।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) ময়মনসিংহ নগরীর ঈশান চক্রবর্তী সড়কে পাঁচ দশক ধরে চলা প্রাচীন সংগীত প্রতিষ্ঠান ময়মনসিংহ সংগীত বিদ্যালয় চত্বরে এ শাস্ত্রীয় সংগীতের আসরের আয়োজন করে বিজন তোপদার স্টুডেন্টস ফোরাম। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে এই আসর। আয়োজনটি পরিচালনা করেন উস্তাদ বিজন তোপদার।
বিজ্ঞাপন
শাস্ত্রীয় সংগীতের আসরটির নাম দেওয়া হয় অরুণরঞ্জনী। অরুণরঞ্জনী হচ্ছে জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম সৃষ্ট একটি রাগের নাম। দ্বিতীয়বারের মতো শাস্ত্রীয় সংগীতের এই আয়োজন করা হয়েছে।
আসরে গানে-সুরে মন কাড়েন শিল্পী জয়িতা অর্পা, মীনাশ্রী ভৌমিক মৌ, রুদ্রাক্ষী পাল দিয়া, আনুস্কা চক্রবর্তী দিয়া, রোদসী পাল, শানীন তাইয়্যেবা, গুলেনূর আলম মারিয়া, লাবণ্য রায় ও সুস্মিতা মজুমদার।
বিজ্ঞাপন
শিল্পী আনুস্কা চক্রবর্তী দিয়া বলেন, শাস্ত্রীয় সংগীত দুরুহ হলেও এখানে প্রাণের স্পর্শ আছে। এতে বিশেষ আত্মতৃপ্তি খুঁজে পাই।
ফুলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক শাফায়েত জামিল সাজু বলেন, এ আয়োজনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মে শাস্ত্রীয় সংগীতের আগ্রহ বাড়বে। পৌষের শেষ রাতে নান্দনিক এ আয়োজন সকলকে মুগ্ধ করেছে।
সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করা নোভিস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আসলাম বলেন, শুদ্ধ সংগীতের জন্য শাস্ত্রীয় সংগীতের দখল প্রথম শর্ত। শাস্ত্র না জেনেই অনেকে গান গায়। গানের নতুন শিক্ষার্থীদের মধ্যে শাস্ত্রীয় সংগীতের আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে এ ধরনের আয়োজনের বিকল্প নেই।
ময়মনসিংহ সংগীত বিদ্যালয়ের পরিচালক সাংবাদিক নজীব আশরাফ বলেন, সমস্ত সংগীতের ভিত্তি হচ্ছে শাস্ত্রীয় সংগীত বা রাগ সংগীত। এটি দুরুহ সাধনা। সবাই খুব স্বল্প মেয়াদে গান শিখে শিল্পী হতে চায়। কিন্তু রাগ সংগীতের মাধ্যমে শিল্পী হওয়া খুব কঠিন। যেহেতু রাগ সংগীত সময় সাধ্য এবং দীর্ঘ সময় আত্মনিবেদন করতে হয় সে কারণে সহসা কেউ এর চর্চা করতে চায় না। রাগ সংগীতের চর্চা বাড়ানো ও উদ্বুদ্ধ করার জন্য এই আয়োজন। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার চরম অবক্ষয়ের মধ্যে সংগীত চর্চার বিকল্প নেই।
উবায়দুল হক/আরএআর