‘যশোরের যশ খেজুরের রস’ কথাটি এখনো মানুষের মুখে মুখে থাকলেও খেজুর গাছের সংকটে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে জেলার শত বছরের এ ঐতিহ্য। যে খেজুর রস এবং গুড়ের জন্য যশোর বিখ্যাত সেই খাটি রস ও গুড় পাওয়াই যেন এখন ভাগ্যের ব্যাপার। আর তাই খেজুরগাছ রক্ষা, গাছিদের সম্মান দেওয়া ও উৎপাদিত গুড় সঠিক দামে বিক্রির উদ্দেশ্যে দুই দিনব্যাপী খেজুর গুড়ের মেলার আয়োজন করেছে চৌগাছা উপজেলা প্রশাসন। 

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ২ দিনব্যাপী এ খেজুর গুড়ের মেলার উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ড. মোস্তানিছুর রহমান, চৌগাছা পৌরসভার মেয়র নূর উদ্দিন আল-মামুন হিমেল। 

মেলায় চৌগাছা উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক গাছি অংশগ্রহণ করেছেন। গাছিরা নিজেদের তৈরিকৃত খেজুর রসের খাঁটি গুড়, নলেন গুড়, পাটালী গুড় ও খেজুরের রস নিয়ে মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। গাছিরা জানান, খেজুরগাছ কেটে রস সংগ্রহ করে জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করতে যে খরচ হয় সেই তুলনায় তারা সঠিক দাম পান না। অন্যদিকে খেজুরগাছ রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের কোনো উদ্দ্যোগ না থাকায় দিনের পর দিন খেজুরগাছ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। খেজুরগাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি রস ও গুড়ের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করলে এ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন গাছিরা। মেলায় খেজুরের রস বিক্রি হচ্ছে প্রতি ভাড় ২০০ টাকা ও গুড় বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে। 

উপজেলার সলুয়া গ্রামের গাছি রশিদ শেখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, 'আমি গত ৩৫ বছর ধরে খেজুরগাছ কাটি। কালে কালে গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এখন নিজের তত্ত্বাবধানে ৮০টি গাছ আছে। প্রতিবছর এই ৮০টি গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে গুড় বানাই। গুড় বানাতে যে খরচ হয় সে তুলনায় লাভ হয় না।'

পুড়োপাড়া গ্রামের গাছি আব্দুল হামিদ বলেন, 'আমি ছোট অবস্থায় আমার বাবার সঙ্গে গাছ কেটেছি। আজ প্রায় ৫০ বছরেরও অধিক সময় হয়ে গেছে। এটা আমার পেশা। তবে আগে যেমন গাছ কাটার প্রতি গাছিদের আগ্রহ ছিলো এখন আর তেমন আগ্রহ নেই। সঠিক মূল্য না পাওয়ায় আর খেজুরগাছের সংকটে এ এতিহ্য বিলুপ্তির পথে। 

চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা জানান, 'যশোর জেলা খেঁজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত হলেও নানা কারণে খেজুরগাছ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। খেজুরগাছ রক্ষার সঠিক ব্যবস্থা না করলে ভবিষ্যতে জেলার ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে। ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এবং গাছিদের উদ্বুদ্ধ করতে আজকের এই খেজুর গুড়ের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এবং গাছিরাও স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহন করেছে। এ মেলা ঘিরে দুদিনের আয়োজনে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও সেরা গাছিদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। 

চৌগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ড.মোস্তানিছুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাছিদের অভিযোগ দিনের পর দিন খেজুরগাছ হারিয়ে যাচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যক্তিরা খেজুরগাছ কেটে ইট ভাটায় নিয়ে জ্বালানীর কাজে ব্যবহার করছে। যশোরের এ ঐতিহ্য এবং খেজুরগাছ টিকিয়ে রাখতে সরকার যদি সড়কের পাশে খেজুরগাছ রোপনের উদ্যোগ নেয় তাহলে আরও ভালো হবে। খেজুরগাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে গাছিদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। 

উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, চৌগাছা উপজেলায় পূর্বে খেজুরগাছের সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় লাখ। তবে কালের বিবর্তনে বর্তমানে খেজুরগাছের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ হাজার এবং গাছি রয়েছেন প্রায় ৮০০ জন। 

এ্যান্টনি দাস অপু/আরকে