বাঁশঝাড়ের ভেতরে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় দুই ঘণ্টা পানির বোতল রেখে সেই পানি পান করলেই অসুস্থ মানুষ সুস্থ হয়ে যাচ্ছে- এমন খবরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পচামাদিয়া গ্রামের হাইস্কুল পাড়ার নির্জন একটা বাঁশঝাড়ে শত শত মানুষ ভিড় করেছে। সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রোগমুক্তির আশায় দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এসে সেখানে ভিড় করে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। 

তবে চিকিৎসকরা বলছেন- এটি বিজ্ঞানসম্মত নয়। ধর্ম বিশেষজ্ঞরা বলছেন- এটি গুজব ছাড়া কিছুই না।

বাঁশঝাড়ে গিয়ে দেখা যায়, দূর-দূরান্ত ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শত শত মানুষ ভিড় করেছে। স্থানীয় কয়েকজনের একটি দল সেখানে আসা মানুষদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিচ্ছে। বাঁশঝাড়ের ভেতরের নির্দিষ্ট একটি জায়গা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন পানির বোতল সারিবদ্ধভাবে রেখে আসছেন। কেউ কেউ আগরবাতি জ্বালিয়ে রাখছেন। বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে এসব। সেখানে পানি রেখে আশপাশে সময় কাটাচ্ছে লোকজন। কৌতূহলি মানুষের ভিড়ও দেখা গেছে। উৎসুক জনতাও রোগ সারানোর আশায় পানি রাখছে সেখানে। 

দৌলতপুর ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের পচামাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও বাঁশঝাড়ের মালিক খাইরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্ত্রী ফিরোজা খাতুন দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিল। ডাক্তারকে দেখিয়ে, ওষুধ খেয়ে সুস্থ হচ্ছিল না। তারপর স্বপ্নে দেখেছিল বাঁশঝাড়ের নিচে পানি রেখে তারপর খেলে সুস্থ হয়ে যাবে। এরপর পানি খেয়ে সুস্থ হয়ে গেছে। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। এই কথা শোনার পর থেকে অনেকেই আসছে এখানে, সুস্থও হয়ে যাচ্ছে। বাঁশঝাড়টি আমার। দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে আসছে। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে কোনো দুই নম্বরি নেই, ভেজাল নেই। আমারা সবাই সাদাসিধা সাধারণ মানুষ। আমরা কারও কাছ থেকে টাকা নিই না। আমরা কোনো ধান্দা করি না। শনিবার ও মঙ্গলবারে দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ আসে। তবে সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর লোকজন খুশি হয়ে টিউবওয়েল, বসার জন্য পাটি কিনে দিয়েছে। সুস্থ হয়ে অনেকে মিষ্টি বিতরণ করে। 

খাইরুল ইসলাম বলেন, গত দুই মাস ধরে বেশি লোকজন আসা শুরু করেছে। তাছাড়া চার মাস ধরেই লোকজন আসছে। কেউ টাকা নিচ্ছে না, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। সবাই উপকার পাচ্ছে। অনেকে সুস্থ হয়ে গেছে। অনেকে সুস্থ হওয়ার পথে। কাপড়পোড়া গ্রামের এক নারী সুস্থ হয়ে গেছে। এজন্য ১০ দিন আগে একটা টিউবওয়েল পোতার জন্য ৭ হাজার ৮০০ টাকা দিয়েছে। ডিসি-এসপি আসলেও সমস্যা নেই। কিন্তু ভিডিও বা ছবি তুলতে দেওয়া যাবে না।

সেখানে আসা মাজেদা খাতুন বলেন, আমি দৌলতপুর থেকে রোগমুক্তির জন্য পানি রাখতে এসেছি। শুনেছি অনেক অসুস্থ মানুষ এই জায়গায় পানি রেখে, সেই পানি পান করে সুস্থ হয়েছে। আমি আজ প্রথম এসেছি। 

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক বৃদ্ধ বলেন, আমি সুস্থ হয়ে গেছি। বাঁশঝাড়ের ভেতরের নির্দিষ্ট একটি জায়গায় পানির বোতল রেখে, সেই পানি পান করে এখন আমি ভালো আছি। এজন্য আজ মিষ্টি নিয়ে ছিন্নি দিতে এসেছি। স্ট্রোক করে হাত ও পায়ে শক্তি পেতাম না। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েও কাজ হয়নি। কিন্তু এখানকার পানি খেয়ে এখন আমি সুস্থ।

দৌলতপুর গ্রামের ওমর আলী বলেন, আমার স্ত্রী পেটের ব্যথায় ভুগছিল। দুই সপ্তাহ এখানকার পানি খেয়ে সুস্থ। আমার কাছে কেউ টাকা চায়নি, আমিও কিছু দেইনি। 

স্থানীয়রা বলেন, বাঁশঝাড়ের নিচে পানি রেখে খেলে মানুষ সুস্থ হয়ে যাচ্ছে- এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। অতি উৎসাহী হয়ে মানুষ ভিড় করছে সেখানে। সেখানে অলৌকিক কিছু নেই। এগুলো করা ঠিক না। 

তেলিগাংদিয়া গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী মুশারেফ হোসেন  বলেন, আমি স্ট্রোক  করেছিলাম। এরপর থেকে হাতে পায়ে বল পেতাম না। দুই দিন এখানে পানি রেখে খেয়েছি। তাতেই অনেকটা সুস্থ অনুভব করছি। আজকে আবারো পানি নিয়ে এসেছি এখানে।

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এগুলো বিজ্ঞানসম্মত নয়। এসব কুসংস্কার।

এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। অপরাধমূলক কিছু দেখলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের এক অধ্যাপক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইসলামে এসবের কোনো ভিত্তি নেই। এটি গুজব ছাড়া কিছুই না।

রাজু আহমেদ/আরএআর