ডা. মনিরুল ইসলাম

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মনিরুল ইসলাম একজন  মানবিক চিকিৎসক ছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে শোকাহত চাঁদপুরের চিকিৎসকরা। 

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) ভোররাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চাঁদপুরের বাসায় মৃত্যুবরণ করেন ডা. মনিরুল ইসলাম। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এএইচএম সুজাউদ্দৌলা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ডা. মনিরুল ইসলাম ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চাঁদপুরের বাসায় মারা গেছেন। সকালে তার প্রথম জানাজা চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।

ডা.মনিরুল ইসলাম কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নগরপাড় এলাকার সিরাজুল ইসলামের বড় ছেলে। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা ও এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার স্ত্রী ডা. শারমিন সিদ্দিকী চাঁদপুর শহরের গ্রিন লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মরত আছেন। 

মনিরুল ইসলাম কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ২৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। ২০০৯ সাল থেকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে কর্মরত ছিলেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নগরপাড় এলাকায় দুপুরে দ্বিতীয়  জানাজা শেষে ডা. মনিরুল ইসলামকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এদিকে ডা. মনিরুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. একেএম মাহাবুবুর রহমান ও সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে চাঁদপুর শহর ও জেনারেল হাসপাতালে শোকের ছায়া নেমে আসে।

চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের এক রোগী বলেন, ডা. মনিরুল ইসলাম গতকাল আমাকে চিকিৎসা দিয়েছেন। আজ সকালে জানতে পারলাম তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মৃত্যু খবর শুনে খুবই খারাপ লাগছে। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুন।

চাঁদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আল আমিন বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা মনির ভাইকে জান্নাতবাসী করুন। উনি খুবই ভালো চিকিৎসক ছিলেন। মৃত্যু এমন বিষয় যার স্বাদ সবাইকে নিতে হয়। এটা বয়স চেনে না, চেনে না ডাক্তার না কিংবা কুলি।

স্থানীয় সাংবাদিক সালাম আজাদ জুয়েল বলেন, মনিরুল ইসলাম একজন মানবিক ডাক্তার ছিলেন। তিনি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন করেছেন। তিনি গরিব-অসহায় রোগীদের জন্য কাজ করেছেন। আমরা তার মৃত্যুতে শোকাহত।

বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহীন বলেন, ডা. মনিরুল ইসলাম মেধাবী চিকিৎসক ছিলেন। তার জন্মস্থান কুমিল্লা হলেও তিনি চাঁদপুরের মানুষকে আপন করে নিয়েছিলেন। অনেক জটিল অপারেশন তার হাত দিয়ে হয়েছিল। তার মৃত্যুতে জেলার মানুষ ভালো একজন চিকিৎসককে হারালো। 

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি গিয়াসউদ্দিন বলেন, ডা. মনিরুল ইসলাম খুবই ভালোমানের ডাক্তার ছিলেন। সাধারণ মানুষকে খুবই ভালোবাসতেন। আজ থেকে প্রায় দুই বছর আগে আমার অপারেশন করেছেন। তার কাছে চিকিৎসা নেওয়ার পর আমি সুস্থ হয়েছি। এক কথায় বলতে পারি তিনি একজন মানবিক ডাক্তার। তার তুলনা হয় না। 

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. গোলাম কাউছার হিমেল বলেন, তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তিনি একজন মানবিক মানুষ ছিলেন।  তার মৃত্যু মেনে নেওয়ার মতো না। আমরা একজন ভালো মানুষ হারিয়েছি। কাছের মানুষ ছিলেন তিনি। আপদে-বিপদে পাশে থাকতেন। 

হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক ডা. মো. মুহাম্মদ আসিবুল আহসান চৌধুরী বলেন, ডা. মনিরুল ইসলাম খুব ভালো মনের একজন মানুষ ছিলেন। সার্জারি বিভাগের মানবিক ডাক্তার ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত ।  

আনোয়ারুল হক/আরএআর