জাজিরায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাংবাদিক মাসুদ রানা/ সংগৃহীত

দুটি রেস্টুরেন্টের দেখভাল দিয়ে শুরু হয় মালা রাখাইনের প্রতিদিনের সকাল। তবে আজ তার সকালটা শুরু হয়েছে অন্যভাবে। গাড়ি নিয়ে তাকে যেতে হচ্ছে শরীয়তপুরের জাজিরায়। যেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েক ঘণ্টা আগে নিহত হয়েছেন তার স্বামী মাসুদ রানা।  

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে শরীয়তপুরের জাজিরায় ট্রাকের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষে নিহত ছয়জনের মধ্যে একজন ছিলেন দৈনিক নবচেতনা পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো প্রধান মাসুদ রানা। তার মরদেহ আনতে রওনা দিয়েছেন স্ত্রী মালা রাখাইন। 

মাসুদ রানা বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বাসিন্দা। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট। তিন বছর আগে মালা রাখাইন ও মাসুদ রানা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামীর অনুপ্রেরণায় ব্যবসা সামলাতেন মালা। সাংবাদিকতা আর ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে থাকতেন মাসুদ।

দুর্ঘটনায় নিহত ৬ জনের মধ্যে নূরজাহান বেগম ছিলেন অসুস্থ। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন স্বজনরা। তাদের সাহায্য করতেই সঙ্গী হয়েছিলেন সাংবাদিক মাসুদ রানা। 

নিহত মাসুদ রানা ও তার স্ত্রী

নূরজাহান বেগমের স্বজন ইয়াসিন মল্লিক বলেন, নূরজাহান বেগম আমার ভাবি। আমার ভাই লতিফ মল্লিক আমেরিকা প্রবাসী। তার মেয়ে লুৎফুন্নাহার লিমা। সেও দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। মারা যাওয়া ফজলে রাব্বি হলো আমার মামাতো ভাইয়ের ছেলে। সাংবাদিক মাসুদ রানা ছিলেন লুৎফুন্নাহার লিমার শিক্ষক ও পারিবারিক বন্ধু। 

তিনি বলেন, আমরা এখনো মরদেহ বুঝে পাইনি। মরদেহ বুঝে পেলে গ্রামের বাড়ি বাউফলের কারখানা গ্রামে নিয়ে যাব। আর ফজলে রাব্বির মরদেহ দশমিনায় নিয়ে যাব।

লতিফ ম্যানশনে বসবাসরত মাদরাসার শিক্ষক আব্দুর রহিম বলেন, নূরজাহান বেগম বরিশালের কলেজ এভিনিউর লতিফ ম্যানশনে থাকতেন। দুই মাস ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। রোববার রাত ১১টার দিকে নূরজাহান বেগম বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বরিশালের কেএমসি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করলে সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে লতিফ ম্যানশনের সামনে থেকে যাত্রা করেন তারা পাঁচজন।

নিয়মিত রক্তদান করতেন মাসুদ রানা

স্থানীয় সাংবাদিক মুশফিকুর রহমান বলেন, মাসুদ রানা অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। করোনার সময় তিনি অসহায় মানুষের জন্য দিন-রাত কাজ করেছেন। আমরা একসঙ্গে কাজ করতাম। তিনি অসহায় ও দরিদ্রদের সহায়তা করেছেন। এভাবে তার চলে যাওয়া খুবই কষ্টের।

আরেক সাংবাদিক নূরুল আমিন রাসেল বলেন, মাসুদ রানা সবসময় অপরের উপকার করতে পছন্দ করতেন। তার শেষ যাত্রাও হলো অপরের উপকার করতে গিয়ে। এমন পরোপকারি মানুষ আমরা আর পাব না।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ভোরে জাজিরায় থেমে থাকা ট্রাকের পেছনে ধাক্কা খায় রোগীবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্স। এতে অ্যাম্বুলেন্স চালকসহ মোট ছয়জন নিহত হন। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে/জেএস