জীবনে প্রথম গরু দিয়ে মই টানা খেলা দেখলাম
কুড়িগ্রামে দুই দিন ধরে গরু দিয়ে মই খেলা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এ খেলা দেখতে দূর-দুরান্ত থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ছুটে আসেন। ধান কাটার পর পরে থাকা সমতল জমিতে আয়োজন করা হয় এ প্রতিযোগিতার।
মঙ্গলবার বিকেলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের সোনালীর কুটি গ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই দিন ব্যাপী এ প্রতিযোগিতায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার ১০টি দল অংশ নেয়।
বিজ্ঞাপন
আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ঘোগাদহ ইউনিয়নের সোনালীর কুটি সমাজ কল্যাণ সংস্থা ও ইউনিয়ন পরিষদ যৌথভাবে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সোমবার ও মঙ্গলবার দু-দিন ব্যাপী প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে জেলার বিভিন্নস্থান থেকে লক্ষাধিক নারী-পুরুষ ও বিভিন্ন বয়সী মানুষ ব্যতিক্রমী এ খেলা উপভোগ করেন।
সাধারণত দেখা যায় ফসলের জমি প্রস্তুত করার জন্য একটি মইয়ে দুটি গরুর ব্যবহার হয়। কিন্ত এ প্রতিযোগিতায় একটি মইয়ে ৪টি গরুর ব্যবহার করা হয়েছে। আর একটি মইয়ে দুইজন করে রাখাল অংশ নেয়।
যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে জমি চাষে পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর ব্যবহারের ফলে গরু দিয়ে মই দেওয়ার প্রচলন হ্রাস পেয়েছে। জমি চাষে আবহমান বাংলার মই ব্যবহারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আয়োজন করা হয় এ প্রতিযোগিতার।
বিজ্ঞাপন
খেলা চলাকালীন মাঠের চারদিকে বিভিন্ন ধরনের খেলনা ও খাবার সামগ্রীর পশরা নিয়ে বসেন দোকানিরা। প্রতিযোগিতায় প্রথমস্থান অধিকারী দলকে গরু এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী দলকে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় একটি করে উন্নত জাতের ছাগল।
খেলা দেখতে আসা আমিনুল ইসলাম লিটন বলেন, আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে এই ঐতিহ্যবাহী গ্রাম বাংলার মই খেলা খুব আনন্দের সঙ্গে দেখেছি। সৌভাগ্যবশত আবারও দেখার সুযোগ হলো।
সবুজ নামের এক যুবক বলেন, আমি এই খেলা এর আগে দেখিনি। শুধু বাপ দাদার কাছের এ খেলার গল্প শুনেছি।
আজ বাস্তবে দেখে অনেক অনেক ভালো লাগলো যা বলার ভাষা নেই। একদমই অসাধারণ খেলা। প্রতিবছর যদি এ রকম খেলার আয়োজন হতো তাহলে অনেক ভালো হতো।
খেলা দেখতে আসা পারভীন বেগম বলেন, আমি জীবনে এ খেলা দেখি নাই। শুধুই গল্প শুনেছি। গতকাল এসেছি দেখার সুযোগ হয় নাই।
সদরের ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল সরকার বলেন, মানুষের মনে শুধু আনন্দ দেওয়া নয় গ্রামীন ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। ভবিষ্যতে আবারও আয়োজন করার কথা জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, হারিয়ে যাওয়া গ্রামীন ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিযোগিতার আয়োজন নতুন করে শুরু করার জন্য আয়োজক কমিটিসহ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদকে ধন্যবাদ জানাই।
জুয়েল রানা/এমএএস