চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর ওপর হামলার ঘটনায় সাত দিন পর বুধবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল থেকে অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ভোলাহাট উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার বিদুৎ কুমার মণ্ডলকে এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 

তবে এ ঘটনায় শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াতকে দুষছেন হাসপাতালে চিকিসাৎধীন আহত সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী। তার অভিযোগ, ইউএনও প্রথমে তার সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছিলেন এবং চড়-থাপ্পড়ও দিয়েছেন। তার ইঙ্গিতেই হামলা হয়েছে।

ইউসুফ আলী বলেন, শিবগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের সাবেক এক কর্মচারী অবসরে যাওয়ার পর মারা যান। এরপর তার প্রতিবন্ধী মেয়ের অনুকূলে পেনশনের টাকা দিতে সুপারিশ করেছিলেন ইউএনও আবুল হায়াত। কিন্তু সব কাগজপত্র ঠিক না থাকায় আমি কাগজগুলো নিয়ে আসতে বলি। এতে ইউএনও আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। 

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইউসুফ আলী বলেন, গত ১০ জানুয়ারি বিকেল আড়াইটার দিকে ইউএনও উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের সাবেক এক কর্মচারী অবসরে যাওয়ার পেনশসনের টাকা দিতে সুপারিশের জন্য তার শ্যালিকাকে নিয়ে আমার অফিস কক্ষে প্রবেশ করেন। এর আগেও আমাকে এই কাজের জন্য বলেছিলেন ইউএনও। তাই কক্ষে ঢুকেই আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন তিনি। বলতে থাকেন, ‘আমি বলছি তাই করে দিতে হবে। না হলে থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব।’

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরে ফের আমার কক্ষে প্রবেশ করেন ওই সাবেক কর্মচারীর শ্যালিকা। তিনি বলেন, ইউএনও আপনাকে কাজটা করে দিতে বললেন। তখন আমি বললাম- সব কাগজপত্র নিয়ে আসেন করে দেব। এ কথা শুনেই চলে গেলেন ওই নারী। এর ১০ মিনিট পর ইউএনওর ইঙ্গিতেই আমার ওপর হামলা করা হয়। তারা ঢুকেই আমাকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। এমনভাবে তারা আমাকে পিটিয়েছেন যে সঙ্গে সঙ্গে আমি মাটিতে পড়ে যায়। রক্তে ভেসে যায় অফিসের কাগজপত্র। পরে স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। আমার মাথায় শুধু ১২টা সেলাই লেগেছে। আমাকে যে গালি দিয়েছে তার ভয়েস রেকর্ড আছে।

এর আগে বক্তব্য নেওয়ার জন্য মুঠোফোনে কল দিলে প্রথমে সাব-রেজিস্ট্রারের স্ত্রীকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, জনতা আমার স্বামীকে মারধর করেনি। ইউএনও এটি করিয়েছেন। 

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত। তিনি বলেন, একটি নারী ১৫ মাস ধরে সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে ঘুরছে। এরপরে ওই নারী আমার কাছে এসেছে। তাই গিয়েছিলাম। আমার কথা শোনেননি তখন চলে এসেছি। আমি তাকে কোনো গালিগালাজ করিনি। পরে বিকেল ৪টার দিকে শুনতে পাই সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর ওপর হামলা হয়েছে। তখন আমি ছুটে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। 

ইউএনও আরও বলেন, সাব রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে স্থানীয়দের ব্যাপক অভিযোগ। টাকা ছাড়া কোনো কাজ করতেন না তিনি। তাই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর যে ভয়েস রেকর্ডের কথা বলছেন এগুলো এডিট করা যায়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা রেজিস্ট্রার আফছানা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিবগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভোলাহাট উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার বিদুৎ কুমার মণ্ডলকে। তিনি বুধবার ও বৃহস্পতিবার শিবগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দায়িত্ব পালন করবেন। আর অন্য কর্মচারীরা কার্যালয়েই অবস্থান করছেন। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির কাজ চলছে। 

এর আগে গত ১০ জানুয়ারি বিকেলে সেবা না পাওয়ার অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীকে পিটিয়ে জখম করেন সেবাগ্রহীতারা। তাকে প্রথমে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। 

জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) আহত সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর পরিবারের লোকজন ছাড়পত্র নিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়েছে। 

জাহাঙ্গীর আলম/আরএআর