খেতের পাশে খাল হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার তেঘরিয়া ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ ও আব্দুল্লাহপুর গ্রামে একটি খাল খননের ফলে হাজারো কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এখন আর তাদের বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। ফলে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন তারা।

জানা গেছে, ওই দুই গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক গুঙ্গিয়াজুরি হাওরে ১০০ বিঘা জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পানি দেওয়ার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বোরো জমি চাষের পর ফাল্গুন-চৈত্র মাসের শেষের দিকে বৃষ্টির জন্য কৃষকদের অপেক্ষা করতে হতো। আবার বৈশাখে ঝড়-বৃষ্টিতে তাদের কষ্টার্জিত ফসল বাড়িতে নিতে অনেক বেগ পেতে হতো। দীর্ঘদিন ধরে তাদের এমন দুর্ভোগ দেখে এগিয়ে আসে স্থানীয় এনজিও এসেড। 

জাপানি সহায়তায় এসেড হবিগঞ্জে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ এ্যাডাপটিভ এগ্রিকালচার এক্সপেনশন প্রজেক্ট ইন হাওর এরিয়া’ নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে খাল খনন করে। খাল খননের পর কৃষকের জমির পানির সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি একটি নতুন রাস্তা তৈরি করা হয়। এ রাস্তা দিয়ে গুঙ্গিয়াজুরি হাওর থেকে সহজেই কৃষকরা তাদের জমির ধান বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবেন। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, এখন আর জমিতে পানি দেওয়ার জন্য বৃষ্টির অপেক্ষা করতে হবে না। খাল খননের ফলে খালে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে কৃষকরা সহজেই জমিতে পানি দিতে পারছেন। নতুন রাস্তা তৈরি হওয়াতে আগামী বৈশাখ মাসে জমি থেকে ধান কেটে সহজেই কৃষকরা বাড়িতে কিংবা গোলায় নিয়ে যেতে পারবেন।

এনজিও এসেড হবিগঞ্জে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে খালটি খনন করেছে

স্থানীয় সৈয়দাবাদ গ্রামের কৃষক ইদ্রিছ আলী বলেন, খাল খননের মাধ্যমে আমাদের জমিতে এখন পানি দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এ ছাড়া নতুন রাস্তা তৈরি হওয়াতে আমরা হাওর থেকে কোনো অসুবিধা ছাড়াই ধান কেটে বাড়িতে নিতে পারব। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।

একই গ্রামের কৃষক ও সাবেক ইউপি সদস্য ইয়াকুব খান জানান, এই প্রকল্পে দুটি কাজ আমাদের হয়েছে- একদিকে খাল খনন অপরদিকে নতুন রাস্তা নির্মাণ। আগে হাওরের ধান শ্রমিকের মাধ্যমে কাঁধে করে নিতে হতো। এখন আমরা ছোটখাটো গাড়ির মাধ্যমে নিয়ে যেতে পারব। 

আমরা এখন ৫০/৬০ একর জমিতে স্যালোমেশিনের মাধ্যমে পানি দিতে পারছি। আগে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হতো। প্রকল্পটির কারণে আমাদের অনেক উপহার হচ্ছে।  

ইয়াকুব খান, সাবেক ইউপি সদস্য

স্থানীয় কৃষক শমসু মিয়া বলেন, খাল খনন প্রকল্পের কারণে এখন আর জমিতে পানির অভাব হচ্ছে না। নতুন রাস্তা হওয়ার কারণে হাওর থেকে ধান আনতে অসুবিধা হবে না। এখন ট্রলির মাধ্যমে ধান আনতে পারব।

কৃষক কাজল মিয়া জানান, খাল খননের আগে নদী থেকে জমিতে পানি দিতে হতো। এখন খালের পানি জমিতে ব্যবহার করতে পারছি।

এনজিও এসেডের নির্বাহী পরিচালক জাফর সোবহান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সৈয়দাবাদ ও আব্দুল্লাহপুর গ্রামের কৃষকরা মাঠের ফসল নিয়ে আসতে পারত না। পাশাপাশি ধান বের হওয়ার সময় পানির অভাবে অধিকাংশ ধানেই চিটা হতো। এ বিষয়ে দুই গ্রামের লোকজন আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিল। 

আমরা জাপানিজ প্ল্যানড ফর গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় এক হাজার মিটার খাল খনন ও রাস্তা তৈরি করি। ফলে এখান থেকেই জমিতে পানি দিতে পারবে কৃষকরা। কোনো সমস্যা হবে না। গত বছর পানি সেচের অভাবে অনেক কৃষকের ফসল কম হয়েছিল। 

হবিগঞ্জ নাগুরা ফার্মের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোজাম্মেল হক জানান, খাল খননে পানি সেচের সুবিধা বেশি পাওয়ার কারণে কৃষকদের ফলন বৃদ্ধি পাবে এবং তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। পাশাপাশি রাস্তা হওয়ার কারণে কম খরচে ও সহজে তারা মাঠের ফসল ঘরে তুলতে পারবে।   

মোহাম্মদ নূর উদ্দিন/এসপি