দিনভর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের অপেক্ষায় থেকেও তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত না হওয়ায় ভোলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল উদ্বোধন হয়নি। তিন বছর আগে নির্মাণ কাজ শেষ হলেও নানা জটিলতায় হাসপাতালটি এখনো উদ্বোধন করা হয়নি। যদিও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) দিনভর অপেক্ষায় ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে হাসপাতালটির উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।

সকাল সাড়ে ৯টায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৭ তলা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটি উদ্বোধন করার কথা ছিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য সকালে ভোলা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের হল রুমে উপস্থিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মমিন টুলু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন বিপ্লব, ভোলার সিভিল সার্জন ডা. কে এম শফিকুজ্জামান, ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ লোকমান হাকিম, ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারী, হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী, নার্স, স্টাফ ও গণমাধ্যমকর্মীরা।

সকাল থেকে বসে থেকে অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জানানো হয় হাসপাতালটি আজকে উদ্বোধন করা হবে না। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেবিকারা বলেন, সারাদিন না খেয়ে বসে থেকে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

হাসপাতাল উদ্বোধন না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. লোকমান হাকিম সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য দেননি। তবে তিনি জানিয়েছেন, শুক্রবার হাসপাতালটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

ভোলা ডেভেলপমেন্ট ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক মো. জহিরুল আলম বলেন, যেহেতু হাসপাতাল ভবনটি আরও অনেক আগেই নির্মাণ হয়েছে, সেহেতু অনেক আগেই এটি উদ্বোধন করা উচিত ছিল। হয়তো কোনো সমন্বয়ের অভাবে এতদিন পর্যন্ত এটি উদ্বোধন হয়নি। অচিরেই উদ্বোধন হওয়া দরকার। সবকিছু ঠিক থাকার পরও তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকাটা আসলেই দুঃখজনক।

ভোলা টেলিভিশন জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি আহাদ চৌধুরী তুহিন বলেন, ভোলার ২১ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার জন্য নির্মিত হাসপাতালটি এতদিনেও উদ্বোধন না হওয়াটা দুঃখজনক। এই ভবনটি উদ্বোধন না হওয়ায় পুরাতন ভবনের বারান্দায় শীতের মধ্যেও সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। অনেক কালক্ষেপণের পর ১৯ জানুয়ারি উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। গণমাধ্যমকর্মীসহ অতিথিরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও উদ্বোধন না হওয়াটা দুঃখজনক। এটার পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ আছে কিনা সেটাও এখন ভাববার বিষয়। তারপরও খুব দ্রুতই এটি উদ্বোধন হওয়া দরকার।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ভোলা জেলা শাখার সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী বলেন, এ ভবনটির নির্মাণ কাজ আরও তিন বছর আগে শেষ হয়েছে। গত তিন বছর ধরে ভবনটি উদ্বোধন না করে প্রশাসন অন্যতম জঘন্য অপরাধ করেছে। এটি ভোলাবাসীর সঙ্গে মশকরা। কোনো মন্ত্রী-এমপির জন্য সারাদিন বসে থেকে উদ্বোধন না হওয়াটা দুঃখজনক। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫০ শয্যার ভোলা জেনারেল হাসপাতালে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত এই সাত তলা ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের ১ বছর আগে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছেগণপূর্ত বিভাগ। অথচ ভবনটি নির্ধারিত সময়ের আগে নির্মিত হলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে চালু না হওয়ায় পুরোপুরি সুবিধা পান না ভোলার চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশীরা। ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি বর্তমানে চলছে পুরোনো ১০০ শয্যা ভবনের জনবল দিয়ে।

সাত তলা এই ভবনটিতে আইসিইউ, সেন্ট্রাল অক্সিজেন, মেডিক্যাল গ্যাস সিস্টেম, লিফট ও সিসি ক্যামেরাসহ রয়েছে উন্নত চিকিৎসা সেবার আধুনিক সুবিধা। কিন্তু তিন বছরেও ভবনটি পুরোদমে চালু না হওয়ায় দীর্ঘদিন পড়ে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মেশিনপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ভবনটি ময়লা আবর্জনা আর ধুলাবালির আস্তরে পরিণত হয়েছে। চালুর আগেই ব্যবহার অনুপযোগী এবং অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে।

ভোলা জেলার ৭ উপজেলার ২১ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালসহ ৫০ শয্যার আরও ৭টি হাসপাতাল রয়েছে। এতে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা না থাকায় প্রতিদিনই রোগীদেরকে বরিশাল ও ঢাকায় যেতে হয়। 

আরএআর