সাতক্ষীরায় বরসা নামে এক এনজিও অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগীরা। রোববার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে রতনপুর নূরনগর সড়কে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নারী ও পুরুষ এ মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা বলেন, অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বরসা এনজিও। বার বার তারিখ পরিবর্তন করেও গ্রাহকদের টাকা না দিয়ে টাল বাহানা করে যাচ্ছে তারা। ইতোমধ্যে কর্মকর্তা কর্মচারীরা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। বক্তারা অবিলম্বে বরসা কর্তৃপক্ষের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রদান পূর্বক দিশেহারা গ্রাহকদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। 

মানববন্ধনে অংশ নিতে আসা রতনপুর ইউনিয়নের প্রবাচপুর গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী রুহুল আমিন বলেন, আমি প্রতিবন্ধী। আমার স্ত্রী এবং সন্তান ইটের ভাটায় শ্রমিকের কাজ করে কিছু টাকা জমিয়েছিল। বরসা এনজির কর্মীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সেখানে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা জমা রেখেছিল। সেই টাকা আত্মসাতের খবরে আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। 

একই কথা বললেন কামারগাতি গ্রামের রহিমা খাতুন। স্বামী পরিত্যক্ত রহিমা রেখেছিলেন ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া শ্যামনগরের নুরনগর গ্রামের শ্যামল সাহা জমি বিক্রি করে ১১ লাখ টাকা রেখেছিলেন। এখন টাকার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর আরও ১ বছর অতিক্রম করলেও টাকা না দিয়ে কর্তৃপক্ষ টাল বাহানা শুরু করেছে।    

জানা যায়, এনজিও'র পরিচালক আনিসুর রহমান মারা যাওয়ার পর থেকে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বর্তমান পরিচালক আশিকুর রহমান। তবে দীর্ঘ ১ বছর গত হলেও একজন গ্রাহককে টাকা ফেরত দেননি তিনি। দেশের বিভিন্ন উপজেলায় তাদের ২৩টি শাখা অফিস রয়েছে। ওইসব শাখা থেকে কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়ে দেশের বাইরে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তুলেছেন এনজিওর পরিচালক। জমানো টাকা ফেরত চাইতে গেলে এনজিওর পরিচালক নিজের প্রভাব খাটিয়ে ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়ে দেশের বাইরে পাড়ি জমাতে পারে পরিচালক এমনটা আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

আগামী ১০ দিনের মধ্যে গ্রাহকদের জমানো টাকা ফেরত না পেলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবেন ভুক্তভোগীরা বলে বক্তারা হুঁশিয়ারি প্রদান করেন। এছাড়া জমানো টাকা ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল মুখার্জি বলেন, গ্রামের অসহায় মানুষের টাকা নিয়ে টাল বাহানা করায় কিছুদিন আগে আমরা আন্দোলন করলে তারা ৭৬ কোটি টাকার একটি চেক প্রদান করে। যা পুলিশের কাছে জমা আছে। 

এ বিষয়ে বরসা এনজিও রতনপুর শাখা ম্যানেজার বাবুর আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের মালিক মারা যাওয়ায় একটু সমস্যায় পড়েছি। তবে বর্তমান এমডি ফেব্রুয়ারিতে একটা ভালো সংবাদ দিতে চেয়েছেন। কিন্তু তার আগেই গ্রাহকরা মানববন্ধন করেছে। 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কালিগঞ্জ সহকারী সার্কেল আমিনুর রহমান বলেন, যেহেতু লেনদেনের বিষয় সেহেতু অভিযোগ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এদিকে রোববার দুপুরে এ বিষয়ে সাতক্ষীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজিব খানের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি বরসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসাবসি করেছেন। 

সোহাগ হোসেন/এমএএস