নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং বাজার থেকে রোয়াইলবাড়ি পাকা সড়ক। সড়ক-সংলগ্ন বিশাল এক পুকুরের কারণে ভেঙে পড়ছে সড়কের পাশে থাকা লাখ লাখ টাকা মূল্যের ২৬ বছর বয়সী বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক সরকারি গাছ। শুধু গাছই নয়, ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়কটিও। এ অবস্থায় ওই সড়কে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যানবাহনসহ সাধারণ মানুষদের।

স্থানীয়রা দীর্ঘদিন থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এসব গাছ কর্তন ও সড়কের ভাঙা অংশ মেরামতের দাবি জানিয়ে এলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না বলে তাদের অভিযোগ।

স্থানীয় চিরাং ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে ‘গণ সাহায্য সংস্থা’ নামের একটি সংগঠন বনায়নের লক্ষ্যে সড়কের দুই পাশে মেহগনি, আকাশি, রেইনট্রি, কাঁঠালসহ বিভিন্ন প্রজাতির শত শত গাছ রোপন করে। এসব গাছ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয় একজনকে নিয়োগও করেছিল সংস্থাটি। কিন্তু বর্তমানে এলাকায় সংস্থাটির কোনো কর্মকাণ্ড চলমান নেই। তাই গাছগুলোর পরিচর্যার জন্য নিয়োগকৃত ওই ব্যক্তিও গত ৫-৬ বছর থেকে এসব গাছের আর কোনো খোঁজখবর নিচ্ছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক বছর আগে চিরাং বাজার থেকে চংনোয়াগাঁও পর্যন্ত সড়ক-সংলগ্ন ২৮ একর জমিতে পুকুর দিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন স্থানীয় চিথোলিয়া সমাজকল্যাণ উন্নয়ন সমিতি। সড়কের পাশে ফিশারি পুকুর করার কারণেই মূলত গত বর্ষা মৌসুমে সড়কটির একপাশের মাটি সরে যায়। এতে ভাঙনের কবলে পড়ে সড়কসহ সড়কের পাশে থাকা শত শত গাছ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশাল ফিশারি পুকুরটির জন্য একপাশের মাটি সরে গিয়ে সড়কটি ভেঙে সরু হয়ে গেছে। ভাঙনকবলিত অংশে থাকা শতাধিক গাছের গোড়া থেকে মাটি সরে যাওয়ায় গাছগুলো মরে শুকিয়ে যাচ্ছে এবং ভেঙে ভেঙে পুকুরে পড়ছে।

স্থানীয় চংনোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা রাশিদ মিয়া বলেন, রাস্তাটির অবস্থা খুবই ভয়াবহ হয়ে গেছে। ভাঙা রাস্তা এবং রাস্তার পাশে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ শত শত গাছ আমাদের জন্য আতঙ্কের। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিনই ছোট-বড় যানবাহন ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ শত শত মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু ভাঙা রাস্তা ও গাছের কারণে কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে বলা যায় না। তাই গাছগুলো কাটা ও ভাঙা সড়কটি মেরামতের জোর দাবি জানান তিনি।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক ফারুক মিয়া বলেন, এই রাস্তা দিয়ে সবসময় গাড়ি চালাই। দীর্ঘদিন থেকে সড়কটি ভেঙে ছোট হয়ে গেছে। একটা গাড়ি এলে আরেকটি গাড়িকে সাইড দেওয়া যায় না। এছাড়া রাস্তার পাশের গাছগুলো মরে পড়ছে। কখন যে আমাদের ওপর পড়ে সেই ভয়ে অস্থির থাকি।

এ বিষয়ে চিথোলিয়া সমাজকল্যাণ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে সমিতির কোষাধ্যক্ষ আব্দুল ওয়াহাব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ফিশারির কারণে সড়কের যে ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আর যাতে রাস্তার কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয় সেজন্য সড়ক রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে।

স্থানীয় চিরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল কবীর খান বলেন, ভাঙা সড়ক ও সড়কের পাশে থাকা অতি মূল্যবান শত শত গাছ শুকিয়ে এবং মরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। একইসঙ্গে এলাকার লোকজনও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বিষয়টি আমি উপজেলা পরিষদের সমন্বয় মিটিংয়ে উপস্থাপন করেছি। আশা করি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি ইতোমধ্যে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় আলোচনা করে রেজুলেশন করা হয়েছে এবং বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। এ বিষয়ে দ্রুতই বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

মো. জিয়াউর রহমান/এমজেইউ