বরিশালের বাবুগঞ্জে সাবেক ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি থেকে তার মা ও পুত্রবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় দেলোয়ারের ছিলে সোলাইমান হোসেনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি দেলোয়ারের স্ত্রীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, রহস্য উদঘাটনের জন্য তদন্তের অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে এখনো কাউকে আটক করা হয়নি।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মুঠোফোনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন বাবুগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) অলিউল ইসলাম। তিনি জানান, মামলা তদন্তের জন্য অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারি। তারই অংশ হিসেবে দুপুর দেড়টার দিকে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় নিয়ে এসেছি।

বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আতিক বলেন, মনিরা বেগম নামে ভর্তি রোগীকে আমরা বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হিসেবে চিকিৎসা দিচ্ছি। তবে বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত। ওই রোগীর জ্ঞান ফিরেছে এবং যে কারো সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলতে পারছেন।

বাবুগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মনিরা বেগমের সঙ্গে আমরা এখনো কথা বলতে পারিনি। চিকিৎসক সুস্থ বললে আমরা তার সঙ্গেও কথা বলবো। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রোগী মনিরা বেগমের ওখানে পুলিশ রাখা হয়েছে। তার সঙ্গেও আমরা কথা বলবো। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছি।  

এদিকে নিহত দুই নারীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মনিরা বেগম রহস্যজনক আচরণ করছেন। তিনি কখনো সংজ্ঞাহীন হয়ে থাকছেন আবার স্বাভাবিক আচরণ করছেন। তার সঙ্গে কথা বললে ঘটনার রহস্য পাওয়া যেতে পারে।

কর্মকর্তারা ঘটনার প্রাথমিক বর্ণনা দিয়ে বলেন, রাত ১১টার দিকে প্রতিবেশী এক নারী টয়লেটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হন। তখন তিনি বাড়ির মধ্যে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির অবস্থান দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করেন। তবে ওই ব্যক্তি কোনো উত্তর না দিলে ওই নারী ঘরের ভেতর থেকে টর্চ লাইট আনতে যান। এসে ওই ব্যক্তিকে আর না পেয়ে নিজেদের গোয়ালঘরের দিকে যান। সেখানে গিয়ে গরুসহ সব কিছু ঠিকভাবে দেখতে পান। পরে ঘরে ফেরার সময় সাবেক ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের ঘরের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না আসায় তিনি ভয়ে চিৎকার দিলে আশপাশের বাড়ির লোকজনও সেখানে জড়ো হন। পরে স্থানীয়রা মিলে ঘরের ভেতর গিয়ে তিন নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং পুলিশে খবর দেয়। হাসপাতালের চিকিৎসক দুজন নারীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

নিহত রিপা আক্তারের ফুফু সীমা বেগম দাবি করেছেন, রিপাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মূলত রিপার স্বামী সোলায়মান হোসেন এই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। রিপার সঙ্গে স্বামী সোলায়মানের পারিবারিক ঝামেলা চলছিল। এ নিয়ে একবার সোলাইমান তার স্ত্রী রিপাকে ডিভোর্স দেয়। তবে স্থানীয়ভাবে সালিসের মাধ্যমে পুনরায় কাবিন করে বিয়ে দেওয়া হয়। এরপরও দুজনের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না।

সীমা দাবী করেন, মূলত রিপাকে হত্যা করতেই পরিকল্পনা করা হয়। এক্ষেত্রে রিপার দাদি শাশুড়িকেও হত্যা করা হয় যেন কেউ সন্দেহ করতে না পারে। তাছাড়া গতকাল রাতে রিপার প্রতিবেশীরা এক যুবককে ঘরের সামনে দেখেন। কিন্তু চিনতে পারেনি। প্রতিবেশীদের দেখে সেই যুবক অন্ধকারে মিলিয়ে যান। আমার ধারণা সেই যুবকই হচ্ছে রিপার স্বামী সোলাইমান। তাছাড়া যেখান থেকে সিঁধ কাটা হয়েছে সেখান থেকে লোক উঠতে পারে না। কোনো লোক ওঠেনি। সিঁধ যেখানে তার ভেতরে ঘরের অংশে চৌকির নিচে মাকড়শার জাল রয়েছে। যদি কেউ ওই দিক দিয়ে ঢুকতো তাহলে সেগুলো ছিঁড়ে যেত।

প্রসঙ্গত, বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড ভূতেরদিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি থেকে তার মা ও পূত্রবধূর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার হওয়া তার স্ত্রী মিনারা বেগম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর