গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক কয়েদি আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনাকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালিয়ে দিতে চাওয়ায় এক কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত ও দুই কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সুপারিশ করা হয়েছে। এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
 ‍
তিনি জানান, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার পাবদা গ্রামের সোহরাব উদ্দিনের ছেলে নজরুল ইসলাম (৩০) স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি হিসেবে ২০২১ সালের ২০ মার্চ থেকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। তার কয়েদি নম্বর ৪৯৭৬/এ। বৃহস্পতিবার সকালে নজরুল ইসলাম কারাগারের ভেতর ফ্যানের সঙ্গে (নেট) কাপড়ে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে অচেতন হয়ে যান। দায়িত্বরত কারারক্ষীরা আত্মহত্যার চেষ্টার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে নজরুল বুকের ব্যথায় অচেতন হয়ে পড়ে বলে জানান। পরে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সুব্রত কুমার বালা বলেন, পরে প্রকৃত ঘটনাটি জানাজানি হলে কারারক্ষী রফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত এবং অপর দুই কারারক্ষী মাইনুদ্দিন ও হামিদ গাজীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আর ঘটনাটি তদন্ত করতে কারাগারের জেলার মো. লুৎফর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পাঁচ কার্য দিবস সময় দেওয়া হয়েছে।  

উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় বুরুদিয়া ইউনিয়নের পাবদা গ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী রহিমা খাতুনের (১৮) সরলতার সুযোগ নিয়ে নজরুল ইসলাম তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে রহিমা খাতুন গর্ভবতী হয়ে পড়লে বিষয়টি তার অভিভাবকদের নজরে আসে। এ নিয়ে সালিসে নজরুল ইসলাম সম্পর্কের কথা স্বীকার করলে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের তিন দিন পর রহিমা একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি রহিমা খাতুন নিখোঁজ হন এবং সাত দিন পর এগারসিন্দুর ইউনিয়নের আঙ্গিয়াদী এলাকার বিলের পানিতে সন্তানসহ রহিমা খাতুনের মরদেহ ভেসে উঠে।

২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি রহিমা খাতুনের বড় ভাই আব্দুল আওয়াল বাদী হয়ে নজরুল ইসলামসহ তার পরিবারের চারজনকে আসামি করে পাকুন্দিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। একই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি নজরুল ইসলাম পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। পরে তাকে আদালতে তোলা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাকুন্দিয়া থানার আহুতিয়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শাহাব উদ্দিন নজরুল ইসলামকে একমাত্র আসামি করে ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আবদুর রহিম মামলার একমাত্র আসামি  নজরুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। 

শিহাব খান/আরএআর