দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে জীবনসায়াহ্নে সাদিয়া আক্তার মুক্তা

নাক, মুখ ও চোখ দিয়ে ঝরছে রক্তধারা! শুনতে অবাক লাগলেও ঘটনা সত্য। এমনই এক বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন নাটোরের ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরী। এ অবস্থায় জমিসহ ঘরের আসবাবপত্র বিক্রি করেও চিকিৎসার খরচ মেটাতে না পেরে প্রধানমন্ত্রীসহ সমাজের হৃদয়বান মানুষের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে দরিদ্র পরিবারটি।

দশম শ্রেণিতেই থমকে গেছে মুক্তার পড়াশোনা। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে তার জীবন এখন দুর্বিষহ। তার চোখ দিয়ে জল নয়, অঝোরে ঝরে রক্তধারা। মুখ ও নাক দিয়েও আসে রক্ত। তার বাবাও পঙ্গু। সড়ক দুর্ঘটনায় ভেঙে যায় তার একটি পা। তার নয় মাসের ছোট ভাইও আক্রান্ত আরও জটিল রোগে।

সাদিয়া আক্তার মুক্তা নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী। অসুস্থতার কারণে আজ তার জীবনে নেই কিশোরীসুলভ চপলতা। তার শারীরিক কষ্ট, জীবনের অনিশ্চয়তা আর দুঃখ যেমন ভর তার মনে; পরিবার, স্বজন, পরিচিতজনদের ওপরও।

এমন অবস্থায় দিশেহারা তার দরিদ্র বাবা-মা। মুক্তার বাবা শ্বশুরবাড়ির জমি বিক্রি করে দুই বছরের বেশি সময় ধরে মেয়ের চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু সুফল মেলেনি। তাকে এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন ভারতে নিয়ে যেতে। কিন্তু নিম্ন আয়ের পরিবারটির সেই আর্থিক সংগতি নেই। এখন পর্যন্ত চিকিৎসায় সব সঞ্চয় শেষ। আবার সম্পদ যা কিছু ছিল, সেগুলোও বিক্রি করে দিয়েছেন।

ঢাকার সভার হেমায়েদপুর বাগবাড়ী (দক্ষিণ শ্যামপুর) এলাকায় ১৮ বছর ধরে বাস করেন তারা। তাদের গ্রামের বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বামনকোলা গ্রামে। মুক্তা পরিবারে মেজ সন্তান। তার একজন বড় ও নয় মাস বয়সী ছোট ভাই আছে। মুক্তার মা গৃহিণী।

মুক্তার বাবা মাসুদ রানা পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের পোশাক কারখানায় বয়লার অপারেটর হিসেবে কাজ করেন তিনি। সামান্য বেতনে পরিবারের ভরণপোষণ ও মেয়ের চিকিৎসা ব্যয় চালাতে একেবারেই অক্ষম। মুক্তার এই দুর্গতি প্রায় তিন বছর আগে থেকে। তার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর মুক্তা স্ট্রোক করে।

ঢাকা পোস্টকে মাসুদ রানা বলেন, তিন দিনের ছুটিতে নাটোরে দেশের বাড়িতে গিয়েছিলাম। ওইখানে ২০১৮ সালের ১১ আগস্ট আমি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হই। এতে আমার ডান পা ভেঙে যায়। সেই খবর ও (মুক্তা) সহ্য করতে পারেননি। ২৪ আগস্ট স্ট্রোক করে। তখন তার বয়স ১২ বছর। আমার আর মেয়ের অবস্থা দেখে স্ট্রোক করে আমার আম্মা মারা গেলেন। আমার দাদিও মারা গেলেন। এরপর থেকে ওর অসুস্থতা ক্রমেই বাড়তে থাকে। একসময় মুখ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। তারপর নাক দিয়ে। এ রকম করতে করতে এখন দুই চোখ, মুখ, নাক দিয়ে রক্ত পড়ে অঝোরে।

চোখের পানি যেভাবে পড়ে, ওইভাবে দুই চোখ বেয়ে রক্ত পড়ে। কখনো ১০ মিনিট রক্ত পড়ে। আবার কখনো এক ঘণ্টা ধীরে ধীরে পানির মতো পড়তে থাকে। কখনো দুই-চার মিনিট পড়ার পরই বন্ধ হয়ে যায়। মেয়ের এমন দুর্গতির কথা বলতে বলতে চোখে পানি আটকাতে পারেননি মাসুদ রানা।

তিনি বলেন, বমি যতক্ষণ বন্ধ না হয়, ততক্ষণ রক্ত পড়তেই থাকে। বমির প্রেশার বেশি হলেই রক্ত বেশি পড়ে। নাক, মুখ, চোখ দিয়ে রক্ত পড়ার আগে বমি আসে। মাথাব্যথা করে, চোখমুখ জ্বালাপোড়া করে। দিনে তিন-চারবার রক্ত আসে। দিনে না হলে রাতে রক্ত পড়েই। যা খায়, তার চেয়ে বেশি রক্তবমি করে।

মেয়ের চিকিৎসার জন্য সাধ্য অনুযায়ী সব জায়গায় গিয়েছেন মাসুদ রানা। ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউট, সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও চিকিৎসা করিয়েছেন।

মেয়েকে সবশেষ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক মাস রেখেছেন মাসুদ রানা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ডাক্তাররা ইন্ডিয়ার ভেলরে নিয়ে যাইতে বলছে।

নিজের আর্থিক অসংগতির কথা তুলে ধরে মুক্তার বাবা জানান, উন্নত চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য তার নেই। বাংলাদেশেও যে একটু ভালো চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। এমনিতেই তার সামান্য বেতন। এ ছাড়া লাখ লাখ টাকা ঋণ হয়ে গেছেন মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে।

আমার যা ছিল, এখন মনে করেন নিঃস্ব পর্যায়ে চলে আসছি। ওর, আমার, ওর দাদির একই টাইমে সব চিকিৎসা করাইতে হইছে। আমার জন্য শ্বশুরবাড়ির জমিও বন্দক দিছে। এখন মিনিমাম লাখ দুয়েক টাকা হলে মুক্তাকে আমি ইন্ডিয়া নিয়ে যেতে পারতাম। আমার মেয়ে সুস্থ হোক, এতটুকুন পেলেই আমার জন্য যথেষ্ট, যুক্ত করেন তিনি।

মুক্তা ঢাকা পোস্টকে বলে, রক্ত পড়ার সময় চোখ জ্বালাপোড়া করে। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে পাতলা রক্ত আসত। ধীরে ধীরে ঘন রক্ত আসা শুরু হয়।

তার চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সবার সহযোগিতা চেয়েছে পরিবারটি। সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: মো. মাসুদ রানা, হিসাব নং-১৫০৮২০১৯৬৪১৬৪০০১, ব্র্যাক ব্যাংক, বলীভদ্র শাখা, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা। নগদ/বিকাশ নম্বর (পার্সোনাল) ০১৭১৮-৬৫১৯৮০ (ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ)।

এনএ