চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর ওপর হামলার ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াতকে প্রধান আসামি করে মামলার আবেদন করেছেন আহত সাব-রেজিস্ট্রার। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থিত হয়ে এই মামলার আবেদন করেন তিনি।

এতে শিবগঞ্জের ইউএনও আবুল হায়াতসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়। অন্যান্য আসামিরা হলেন-চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার রাজারামপুর এলাকার আলাউদ্দিনের মেয়ে সালেনুর বেগম এ্যানি, শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের নিশিপাড়া গ্রামের আল আমিন জুয়েল ও সদর উপজেলার বাখেরআলী বিশ্বনাথপুর গ্রামের মর্তুজা আলীর ছেলে তমাস উদ্দিন।

মামলার বাদী বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার গন্ডগ্রাম গ্রামের মৃত ইমদাদুল হকের ছেলে সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী মামলার আবেদনে উল্লেখ করেন, গত ১০ জানুয়ারি বিকেল ৩টা ১০ মিনিটের দিকে সাব-রেজিস্ট্রারের এজলাস ও খাস কামরায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াতের নির্দেশনায় ও তার হুকুমে হামলা হয়। এ সময় সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।

মামলার আবেদনে সাব-রেজিস্ট্রার আরও উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে ইউএনও আবুল হায়াত মামলার দুই নম্বর আসামি সালেনুর বেগম এ্যানিকে সঙ্গে নিয়ে অফিসে এসে অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহায়ক মৃত তালেব আলীর পেনশনের কাগজপত্রের ছাড়পত্র দিতে বলেন। কিন্তু এর সপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে অনুরোধ করলে ইউএনও অকথ্য ভাষায় কথা বলেন। বিষয়টি জেলা রেজিস্ট্রারকে জানাতে হাতে ফোন নিলে তিনি তা কেড়ে নেন এবং কলার ধরে কিল-ঘুষি মারেন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

ইউসুফ আলী মামলার আবেদনে জানান, মারধর করে ইউএনও চলে যাওয়ার পর সেই মহিলাকে সঠিক কাগজপত্র না থাকায় ফিরিয়ে দিলে ইউএনওর আনসার বাহিনী অফিসে এসে সকল সেবাগ্রহীতাদের তাড়িয়ে দেয়। পরে ইউএনওর নির্দেশে লাঠি, লোহার রড ও পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। হামলার পরের দিন ১১ জানুয়ারি শিবগঞ্জ থানায় ইউএনও আবুল হায়াতের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে গেলে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানানো হয় বলে অভিযোগ করেন সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী।

বাদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাদী নিজে আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলার আবেদন করেছেন। বিচারক বাদীর সকল ঘটনা ও অভিযোগ শুনেছেন। আমরা আশা করছি, আদালতে সঠিক বিচার পাব। এ সময় আদালতে সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াতের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।

শিবগঞ্জ থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চৌধুরী জোবায়ের আহমেদ ঘটনার পরের দিন থানায় মামলা না নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। মুঠোফোনে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার পর থেকেই আহত সাব-রেজিস্ট্রার এলাকায় নেই। সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী থানায় আসেননি। তবে থানায় তার পক্ষে একটি মামলা গ্রহণ করা হয়েছে এবং আসামিও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, নিজ কার্যালয়ে হামলার পরের দিন ১১ জানুয়ারি রাতে এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-শিবগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক সাজিরুল ইসলাম, আলফাজ উদ্দিন ও রোজবুল হক। ১১ জানুয়ারি রাতে মোহরার মামুন অর রশিদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে শিবগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন।

এর আগে ১০ জানুয়ারি বিকেলে হামলায় আহত হন শিবগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী। পরে অফিসের কর্মচারী ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। গত ২১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতাল থেকে আহত সাব-রেজিস্ট্রারের পরিবার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে গত ২ ফেব্রুয়ারি তিনি ছাড়পত্র পান।

মো. জাহাঙ্গীর আলম/এমজেইউ