ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খাইয়া আছি
জুট মিলের গেটের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোনাজাতে হাত তুলে আকুতি জানাচ্ছেন চাকরি হারানো শ্রমিকরা
‘আমাগো পাওনা টাকাগুলি পাওয়ার ব্যবস্থা করো আল্লাহ। ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খাইয়া আছি গো মাবুদ।’ নরসিংদী ইউএমসি জুট মিলের মূল গেটের সামনে সোমবার (১৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোনাজাতে হাত তুলে এভাবেই আকুতি জানাচ্ছিলেন চাকরি হারানো শ্রমিকরা।
চাকরি স্থায়ী, বদলি ও মৃত শ্রমিকদের চূড়ান্ত পাওনা পরিশোধের দাবিতে দ্বিতীয়বারের মতো আড়াই শতাধিক বদলি শ্রমিক-কর্মচারী মূল গেটের সামনে জড়ো হয়। পরে তারা নরসিংদী সদরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড-নাগরিয়াকান্দি সড়কে অবস্থান নেয়। এর আগে ৮ মার্চ এই বছরের প্রথমবারের মতো আন্দোলন করে তারা।
বিজ্ঞাপন
আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার ২০২০ সালের ১ জুলাই এই মিলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তারপর সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সকল পাওনা টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয় মিল কর্তৃপক্ষ। সময় যায়, শ্রমিকদের দিন কাটে কষ্টে। এর মধ্যে শ্রমিকরা বেশ কয়েকবার মিলে যোগাযোগ করলেও টাকা পরিশোধ করেনি তারা।
সর্বশেষ সোমবার সকালে ২০১৯ সালের বকেয়া বিল, বদলি শ্রমিকের এরিয়া বিল, মৃত শ্রমিকদের মৃত দাবি, মহার্ঘ ভাতার বকেয়া বিল ও শ্রমিকদের বেতনাদির চূড়ান্ত হিসাব প্রদানসহ মোট ১০টি দাবিতে মিল গেটে সমবেত হয় শ্রমিকরা।
বিজ্ঞাপন
এজাজ খান নামে এক শ্রমিক জানান, আমি গত চার বছর এখানে কাজ করেছি। আমার বাসায় ৯ মাসের একটি বাচ্চা আছে। দুধ কেনার টাকার জন্য হাত পাততে হচ্ছে।
সোহেল মিয়া নামে এক বদলি শ্রমিক কাজ করছেন টানা পাঁচ বছর। তিনি বলেন, এখন রাজমিস্ত্রির কাজ করে চলতে হচ্ছে। চাকরি নেই, পাওনা টাকাও দিচ্ছে না। অনেক দিন এমন গেছে যে একবেলা খেয়েছি। এভাবে চললে পরিবার রেখে দুচোখ যেদিকে যায় চলে যেতে হবে।
শফিকুর রহমান নামে একজন এখানে বদলি শ্রমিকের কাজ করেছেন ২২ বছর। তিনি বলেন, জীবনটাই তো কাটালাম এখানে। এখন আমাদের টাকা দিচ্ছে না। এভাবে চললে আমাদের ২৯০০ শ্রমিককে না খেয়ে মরতে হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় ইউনাইটেড, মেঘনা, চাঁদপুর জুট মিলের (ইউএমসি) জেনারেল ম্যানেজার শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, শুধু আমাদের না, মোট ২৫টি মিলের টাকা আটকে আছে। মন্ত্রণালয় থেকে টাকা আসছে এই মর্মে কোনো নোটিশ বা চিঠি আমরা পাইনি। টাকা আসলে অবশ্যই টাকা দিয়ে দেওয়া হবে।
রাকিবুল ইসলাম/এসপি