বাবা এসে ছেলেকে কলেজে ভর্তি করাবেন। ছেলের সঙ্গে এমনই কথা হয়েছিল বাবার। কিন্তু ছেলের সঙ্গে আর দেখা হওয়ার আগেই সড়কে প্রাণ গেল বাবার। বাবার সঙ্গে কথা বলার আধা ঘণ্টার পরই তার মৃত্যুর খবর পান ছেলে আব্দুল্লাহ আল রিফাত।

সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল পৌরশহরের মালীপাড়ায় ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে যে পাঁচজন নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন অটোরিকশার চালক আমজাদ হোসেন (৫৫)।

নিহত আমজাদ হোসেন ক্ষেতলালের ইটাখোলা এলাকার বাসিন্দা। তার সংসারে রয়েছেন স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগম ও তার ছোট ছেলে আব্দুল্লাহ আল রিফাত। একমাত্র মেয়ে শাপলাকে বিয়ে দিয়েছেন। 

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) আমজাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির উঠোনে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছেন তার স্ত্রী ও আত্নীয়-স্বজনরা।

আমজাদের স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ব্যাংক ও এনজিও থেকে তিন লাখ টাকা ঋণ করে সিএনজি কেনা হয়েছিল। ওই ঋণের টাকা শোধ আবারও কিছু ঋণ হয়। এখনও এক লাখের ওপর টাকা ঋণ রয়েছে। রিফাতের বাবা সিএনজি চালিয়ে ঋণ শোধ করতেন এবং সংসার চালাতেন। ছোট ছেলের লেখাপড়ার খরচও চালাতেন। মানুষটি আমাদের ছেড়ে চলে গেল, এখন কী হবে? সব তো শেষ হয়ে গেল।

নিহতের ছেলে আব্দুল্লাহ আল রিফাত বলেন, আব্বু সারারাত থানার ডিউটিতে গাড়ি চালিয়েছেন। এরপর সকালে জয়পুরহাটে গেছেন। সকালে যখন আব্বুর সঙ্গে কথা হয়, তখন তিনি বলেন 'গাড়ি নিয়ে ক্ষেতলালে রওনা দেব। তারপর এসে তোমাকে কলেজে ভর্তি করাব।' এটিই ছিল বাবার সাথে আমার শেষ কথা। এর আধা ঘণ্টা পর খবর পাই বাবা আর নেই। ট্রাকের সঙ্গে অটোরিকশার সংর্ঘষে বাবা মারা গেছেন।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল সড়কের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক সামছুল আলম বলেন, দুঘর্টনার আগের রাতে আমজাদ ভাই থানার ডিউটিতে গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। ভোরে থানা থেকে স্ট্যান্ডে যান। সকাল ৯টায় একটি টিপ নিয়ে জয়পুরহাটে আসেন। আবার সাড়ে ১০টার দিকে আরেকটি টিপ নিয়ে ক্ষেতলাল যাচ্ছিলেন। পথেই দুর্ঘটনা ঘটে।

এ ব্যাপারে ক্ষেতলাল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজিবুল ইসলাম বলেন, তিনি (আমজাদ) রাতে গাড়ি নিয়ে ডিউটিতে এসেছিলেন বলে শুনেছি। ডিউটি করলে তাদের টাকা দেওয়া হয় না। তবে নাস্তা করানো হয়। অনেক সময় চাহিদা থাকলে টাকাও দেওয়া হয়।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আমজাদের পরিবারের মতো অন্য চারজনের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এই দুর্ঘটনায় কারও মা, কারও বাবা, কারও ভাই, আবার কারও ছেলে চিরতরে চলে গেছেন পরপারে। তাদের এভাবে চলে যাওয়াটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা।

ট্রাক-সিএনজিচালত অটোরিকশার সংঘর্ষের এই দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- ক্ষেতলালের ইটাখোলা এলাকার রইচ উদ্দিনের স্ত্রী শাহনাজ পারভীন (৪৫), শাখারুঞ্জ চৌধুরীপাড়া গ্রামের নাফিস ফুয়াদ (১৮) ক্ষেতলালের নাসিরপুর পূর্বপাড়া জামে মসজিদের ইমাম সিরাজুল ইসলাম (৬০), সিএনজির ড্রাইভার আমজাদ হোসেন (৫৫) ও জয়পুরহাট শহরের বুলুপাড়া এলাকার বাসিন্দা শাহিনুর বেগম (৩৮)। এ ঘটনায় গুরুতর আহত ক্ষেতলাল উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা লায়লা জাহান নাসরিনকে (৪৮) জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বন্যা জানিয়েছেন।

চম্পক কুমার/আরকে