ফাইল ছবি

বড়-ছোট হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলিয়ে বরিশাল বিভাগে সরকারি ১২৬টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে বড় সংকট হলো চিকিৎসকের। সংকটের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে জানালেও সুরাহা হয়নি। ফলে সেবা নিতে আসা রোগীদের ঠিকমতো চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। চিকিৎসা না পাওয়ার বিষয়ে রোগীদের অভিযোগ স্বীকার করেছেন সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তারা।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) চিকিৎসকের মোট পদ ৫২৬টি। যার বিপরীতে মাত্র ২৯৮ জন চিকিৎসক রয়েছেন। শূন্য রয়েছে রয়েছে ২২৮টি পদ। 

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর এই কলেজ থেকেই ২৫২ জন এমবিবিএস শেষ করেন। এছাড়া পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন কোর্সে ১০০ জন, নার্সিং ডিপ্লোমা ৮০ জন এবং ডিপ্লোমা-ইন মিডওয়াইফারিতে ২৫ জন পড়ালেখা করেন। অথচ প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছর পরও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে চিকিৎসক সংকটের সমাধান হয়নি।

শুধু শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নয়, বরিশাল বিভাগের ১২৫টি হাসপাতালের একই চিত্র। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, বিভাগের মোট ১২৫টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ হাজার ২৮১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৬৮৮ জন। পদ খালি ৫৯৩টি।

এদিকে বরিশাল জেলায় ৭৮০ জন চিকিৎসকের অনুকূলে রয়েছেন ৪৬৫ জন। শূন্য পদের সংখ্যা ৩১৫। পটুয়াখালীতে ২৫৯ জনের অনুকূলে আছেন মাত্র ১১৮ জন চিকিৎসক। শূন্য পদের সংখ্যা ১৪১। ভোলায় ২৪৭ চিকিৎসকের মধ্যে আছেন ১২৯ জন। শূন্য পদের সংখ্যা ১১৮। পিরোজপুরে ১৯২টি চিকিৎসকের মধ্যে শূন্য পদের সংখ্যা ৭৭। দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র ১১৫ জন চিকিৎসক। বরগুনা জেলায় ১৮৬ চিকিৎসকের অনুকূলে কাজ করেন ৮৫ জন। শূন্য পদের সংখ্যা ১০১টি। ঝালকাঠি জেলায় ১৪৩ জনের মধ্যে কাজ করেছেন মাত্র ৭৪ জন চিকিৎসক।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবাপ্রত্যাশী রফিকুল ইসলাম বলেন, এই হাসপাতালে কিডনি রোগীদের জন্য কোনো চিকিৎসক নেই। এই রোগে আক্রান্তদের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অথচ অনেকের ঢাকায় যাওয়ার সামর্থ্য নেই।

আরেক রোগী কহিনূর বেগম বলেন, অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই এই হাসপাতালে। অগ্নিদগ্ধদের প্রাথমিক চিকিৎসা পেতে হলেও ঢাকায় যেতে হচ্ছে।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলার সভাপতি কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু এ বিষয়ে বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক এবং নার্সের সংকট সীমাহীন ভোগান্তিতে ফেলছে সেবাপ্রত্যাশীদের। আমি মনে করি সুচিকিৎসার সবচেয়ে বড় বাধা চিকিৎসক সংকট। সংকটকে কাজে লাগিয়ে বরিশালে চিকিৎসার এক ধরনের বাজার তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সের সংকট দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশাল জেলার সভাপতি গাজী জাহিদ হোসেন বলেন, সুচিকিৎসার পথে বাধা যেমন চিকিৎসক সংকট তেমনি চিকিৎসকের আচরণগতও কিছু সমস্যা রয়েছে। একজন রোগীকে অনুরোধ করে চিকিৎসা নিতে হয়। বাস্তবে এটি হওয়ার কথা ছিল না। আমি নিজেও সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করি। এক্ষেত্রে যেটি লক্ষনীয়, রোগীকে ওষুধ ও পরীক্ষা করানোর জন্য বাইরে পাঠানো হয়। তাছাড়া হাসপাতালগুলোর পরিবেশ এত নোংরা যা বলে বোঝানো দায়। এসবের উত্তরণ না ঘটালে সুচিকিৎসা নিশ্চিত সম্ভব নয়।

শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, লোকবল সংকট সমাধানে আমরা চেষ্টা করছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতনরাও জানেন। তারপরও যারা রয়েছেন তারা সেবা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন।

বরিশালের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হুমায়ূন শাহীন খান বলেন, চিকিৎসক সংকটের কথা মন্ত্রণালয় অবহিত রয়েছে। বিভাগের সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার রয়েছে। তবে শূন্য রয়েছে কনসালট্যান্ট পদগুলো। এগুলো পূরণ হলে উপজেলায় উন্নত চিকিৎসা পাবে রোগীরা। তখন জেলার ওপর অতিরিক্ত চাপ কমবে। শূন্য পদগুলো পূরণে চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান আছে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে