প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ছিনতাই ও অপহরণের চেষ্টাকালে পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই)-সহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ওই এসআইয়ের নাম মোজাম্মেল হক। তিনি ঢাকার ডেমরা থানার এসআই বলে ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন ডেমরা থানার পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান।

বৃহস্পতিবার রাতে আড়াইহাজারের প্রভাকরদি বাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। পরে শুক্রবার ছিনতাইয়ের শিকার ব্যবসায়ী সজীব (২৫) আড়াইহাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করলে ওই মামলায় মোট ৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রাজশাহী জেলার বাগমারা থানার ময়েজ উদ্দিনের ছেলে ও ডেমরা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক (৩৭), রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকার মাসুদ মিয়ার ছেলে আতিকুর রহমান ওরফে সোহেল (২৯), একই এলাকার মনজুর হোসেনের ছেলে হালিম মিয়া (২০) এবং বিজয় (২৬)।

আড়াইহাজার থানা সূত্রে জানা গেছে, আড়াইহাজারে ছিনতাই ও অপহরণের চেষ্টাকালে ডেমরা থানার এক এসআই (উপ-পরিদর্শক)-সহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে আড়াইহাজারের প্রভাকরদি বাজার এলাকায় এক ব্যবসায়ীকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার সময় ওই এসআইয়ের কাছ থেকে সরকারি পিস্তল, হ্যান্ডকাফসহ ছিনতাইকৃত টাকা উদ্ধার করে আড়াইহাজার থানা পুলিশ।

মামলায় ভুক্তভোগী সজীব উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তিনি ও তার বন্ধু রাসেল মিয়া (২৬) রূপগঞ্জের গাউসিয়া থেকে সিএনজিযোগে নিজ বাড়ি আড়াইহাজারের পরাবর্দী যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তিনি তার মামা সবুজের (৪০) সাথে দেখা করতে আড়াইহাজারের প্রভাকরদি বাজার সংলগ্ন আবদুর রউফের ভাঙারীর দোকানের সামনে কাশবনের মাঠে নামেন। সেখানে যাওয়া মাত্রই পুলিশের এসআই মোজাম্মেলসহ মোট ৫জন তাকে ঘিরে ফেলেন।

এসময় মোজাম্মেল তার কাছে থাকা পিস্তল বের করে নিজেদের পুলিশের সদস্য পরিচয় দিয়ে সজীব ও তার বন্ধু রাসেলকে হাতকড়া লাগিয়ে দেন। পরে আসামি মোজাম্মেলের সাথে থাকা ছিনতাইকারী চক্রের অন্যান্য সদস্য নিজেদের পুলিশের কন্সটেবল বলে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন এবং মামলার বাদী সজীবরে কাছে থাকা নগদ ৮২ হাজার ৫শ টাকা, মোবাইল ফোন, তার বন্ধু রাসেলের কাছে থাকা ৩৫ হাজার টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।

একপর্যায়ে আসামিরা তাদেরকে হাতকড়া পরানো অবস্থায় কাশবনের মাঠ থেকে টেনে হিচড়ে সামনের রাস্তায় নিয়ে আসে এবং ধস্তাধস্তি করে একটি সিএনজিতে উঠানোর চেষ্টা করে। এসময় সজীব ও তার বন্ধু রাসেল চিৎকার শুরু করলে কিছু দূরেই আড়াইহাজার থানার টহলরত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নুরে আলম সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের নিয়ে এগিয়ে আসেন। এসময় আড়াইহাজার থানা পুলিশের টহল দলকে আসামি মোজাম্মেল নিজেদের ডেমরা থানা পুলিশের সদস্য পরিচয় দেন।

পরে এএসআই নুরে আলম তাদের পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে আসামিরা তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়। বিষয়টি ছিনতাই বুঝতে পেরে এএসআই নুরে আলম আড়াইহাজার থানায় খবর দিলে এসআই নাহিদ মাসুমের নেতৃত্বে অপর একটি পুলিশ টিম ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করে। এসময় অজ্ঞাত এক আসামি পালিয়ে যায়।

পরে আসামিদের কাছ থেকে ৮ রাউন্ড গুলিভর্তি একটি নাইন এমএম পিস্তল, এক জোড়া কালো রঙের হ্যান্ডকাফ এবং ছিনতাকৃত টাকার মধ্যে ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত টাকা ছিনতাইয়ের বলে আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।

এই বিষয়ে ডেমরা থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) শফিকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামি মোজাম্মেল হক ঢাকার ডেমরা থানার এসআই। তবে গ্রেপ্তার হওয়া অপর তিন আসামি তার থানার কনস্টেবল নয় বলে জানান তিনি।

এদিকে আড়াইহাজার থানায় মামলা দায়েরের বিষয়টি স্বীকার করে উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাহিদ মাসুম বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা সংঘবদ্ধ ছিনতাইচক্রের সদস্য। ডেমরা থানার এসআই মোজাম্মেল হকও এই চক্রের একজন হোতা। মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এছাড়া গ্রেপ্তার আসামিদের ডিবি পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, আটককৃতদের অধিকতর তথ্যের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পরবর্তীতে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

আবির শিকদার/টিএম