গ্রেফতার এড়াতে শরীরে পেট্রল ঢেলে আত্মহত্যা
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মেছড়া ইউনিয়নের গুটিয়া মেছড়া গ্রামে পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে জুবায়েল জুবায়ের ওরফে জুয়েলকে রানা (৩৫) নামের এক ব্যক্তি শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি মোটরসাইকেল চোর চক্রের প্রধান সদস্য ও ১১টি মামলার আসামি বলে জানা গেছে। সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দিন ফারুকী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বুধবার (১৭ মার্চ) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। জুয়েল রানা সদর উপজেলার গটিয়া গ্রামের আলমগীর হসেনের ছেলে।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জুয়েল রানার বিরুদ্ধে আটটি চুরিরসহ নয়টি মামলা রয়েছে। মূলত মামলার সূত্র ধরেই বুধবার সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ যমুনা নদী পার হয়ে উপজেলার মেছড়া ইউনিয়নের গুটিয়া মেছড়া গ্রামে জুয়েলের বাড়িতে অভিযান চালায়।
এ সময় জুয়েল বাড়িতে নিজের ঘরেই ছিলেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি দরজা আটকে দেন। ডাকাডাকি করলেও তিনি দরজা খোলেননি। পরে পুলিশ সদস্যদের রামদা ও টেঁটা দেখিয়ে হুমকি দেন। একপর্যায়ে ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মজিদকে ডেকে আনে পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
পরে ইউপি চেয়ারম্যান ওই ওয়ার্ডের সদস্য জহুরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তারাও জুয়েলকে দরজা খোলার জন্য অনুরোধ করেন। তাতেও সাড়া মেলেনি। একপর্যায়ে ঘরের ভেতর থেকে আগুন বের হতে দেখা যায়। এরপর পুলিশ দরজা ভেঙে ভেতর থেকে আগুনে পোড়া জুয়েলের মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় ঘরের মধ্যে থাকা চারটি চোরাই মোটরসাইকেলও পুড়ে যায়।
ইউপি চেয়ারম্যান মজিদ জানান, হয়তো পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে জুয়েল ঘরের ভেতরে গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।
ঘটনাস্থল থেকে সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. স্নিগ্ধ আখতার ঢাকা পোস্টকে জানান, সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে জুবায়েল জুবায়ের ওরফে জুয়েলকে পুলিশ গ্রেফতার করার জন্য গেলে তিনি তার ঘর বন্ধ করে দিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন। পুলিশ এগিয়ে গেলে তাদের রামদা ও টেঁটা দেখিয়ে তাদের ওপর আক্রমণেরও হুমকি দিতে থাকেন। পুলিশ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে তাকে বারবার আত্মসমর্পণের জন্য অনুরোধ করলেও তিনি পেট্রল দিয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে বন্ধ ঘরে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরও জানান, নিহত জুয়েল মোটরসাইকেল চোর চক্রের মূল হোতা। তার ঘর থেকে তিনটি চোরাই মোটরসাইকেল ও ১টি রামদা ও ১ টেঁটাও উদ্ধার করা হয়েছে। জুয়েল সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ জেলায় ১১টি মামলার আসামি। এর মধ্যে ৮টি মোটরসাইকেল চুরি, ১টি অস্ত্র মামলাসহ মারামারির মামলাও রয়েছে। তার মধ্যে ৯টিতেই ওয়ারেন্টভুক্ত এবং এর মধ্যে ১টিতে ৬ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ওয়ারেন্টও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সদর থানার ওসি জানান, জুয়েলের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।
শুভ কুমার ঘোষ/এনএ