পটুয়াখালীতে ব্যতিক্রমী ‘রমজানের বাজার’
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে নিম্ন আয়ের লোকজনের জন্য ভর্তুকি দিয়ে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে পটুয়াখালীবাসী নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। নাম দেওয়া হয়েছে ‘রমজানের বাজার’। যেখানে বাজার দরের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
বুধবার (১৫ মার্চ) সকাল ১০টার দিয়ে শহরের শহিদ আলাউদ্দিন শিশু পার্ক মাঠে সংগঠনের সদস্যরা রমজানের বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন। যেখানে রয়েছে ছোলা, চিনি,মশুরির ডাল, মোটা মুড়ি, লবণ, চিড়া ও সয়াবিন তৈল। পাইকারি দামে বস্তায় বস্তায় পণ্য ক্রয় করে ৫০০ গ্রাম বা ১ কেজি করে প্যাকেটে পরিমাপ করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারের মূল্যের চেয়ে এখানে ২০ থেকে ৩০ টাকা কম মূল্যে পণ্য কিনতে পারছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এখান ৭০ টাকায় কেজি ছোলা, চিনি ৯৫ টাকা, মোটা মুড়ি ৮০ টাকা, মুশুরির ডাল ৮৫ টাকা, লবণ ২৫ টাকা, চিড়া ৪৫ টাকা, সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম রমজানের আগ পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন গরিব ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসব পণ্য বিক্রি করা হবে বলে জানান সংগঠনের সদস্যরা। বাজারদরের চেয়ে কম টাকায় পণ্য কিনতে পেরে খুশি নিম্ন আয়ের মানুষ।
ভ্যান চালক নুর ইসলাম বলেন, বাজারে দিন দিন সব কিছুর দাম বাড়ছে, আমাদের আয় তো বাড়ছে না। এখানে বাজারের চেয়ে কম টাকায় পণ্য কিনতে পেরে আমার খুব ভালো হয়েছে। আমার যতটুকু পণ্য দরকার ততটুকু নিতে পেরেছি এখান থেকে। ধন্যবাদ জানাই সংগঠনের সবাইকে।
বিজ্ঞাপন
স্বনির্ভর রোড এলাকার আচার বিক্রেতা সাত্তার খান বলেন, বাজারে মুড়ির দাম ১২০ টাকা এখানে মুড়ির দাম মাত্র ৮০ টাকা। তারপর অন্য সব মালামালের দাম কম বাজারের দামের চেয়ে। আমাদের মত গরিব মানুষদের জন্য এই সুবিধা পেয়েছি, সেটাই আমাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া।
দিনমজুর ইব্রাহিম বলেন, রমজানে অন্যান্য দেশে মালামালের দাম কমে আর আমাদের দেশে রমজানে মালামালের দাম বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিন একটু একটু করে বাড়তে থাকে মালামালের দাম। এই সংগঠনের রমজানের বাজারে সব পণ্য কম দামে পাওয়া গেছে, আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।
পান বিক্রেতা সাফিয়া বেগম কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার কোন ছেলে নাই। দুটি মেয়ে বিয়ে দিয়েছি তাও স্বামী ছেড়ে গিয়েছে। অনেক কষ্টে দিন যাচ্ছে। রমজান মাস নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম এখানে কম দামে রোজার মালামাল পেয়েছি। আমার খুব উপকার হয়েছে।
পটুয়াখালীবাসী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বলেন, ২০২১ সালে আমাদের সংগঠনকে ইউএন ভলেন্টিয়ার থেকে পুরস্কার বাবদ নগদ টাকা দেওয়া হয়। সেই টাকায় আমরা এই ভর্তুকি দিয়ে পণ্য বিক্রি শুরু করেছি। আশা করছি আমাদের এই প্রজেক্টে বিত্তবানরা সহযোগিতা করবেন।
পটুয়াখালীবাসী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহ-সভাপতি সাবরিনা মেহজাবিন স্বর্ণা বলেন, বিত্তবানদের সহযোগিতা নিয়ে আমরা বিভিন্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতা করে থাকি। এবার রমজান মাস উপলক্ষ্যে নিম্ন আয়ের পরিবারদের জন্য ভর্তুকি দিয়ে পণ্য বিক্রয় করার কার্যক্রম শুরু করেছি। রমজানের আগ পর্যন্ত আমাদের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে। প্রতিদিন আমরা ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা ভর্তুকি দিচ্ছি।
সমাজসেবক নাসরিন মোজাম্মেল এমা বলেন, পটুয়াখালীবাসী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগ সব সময় মানবিক ও ইউনিক হয়ে থাকে। আজকে তারা যে মহৎ কাজটি করছে আমি তাদের এই ভালো কাজের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
উল্লেখ্য, পটুয়াখালীবাসী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে ৫০ জনেরও বেশি সদস্য রয়েছে। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে এই সংগঠনের সদস্যরা মানবিক কাজ করে যাচ্ছেন। মানবিক কাজের জন্য ইতোমধ্যে তারা জেলাবাসীর কাছে বিশ্বস্ত। বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট প্রজেক্টের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করে সংগঠনটি।
মাহমুদ হাসান রায়হান/আরএআর