এভাবে আর কত প্রাণ যাবে কুলসুমদের
চার দিন ধরে অনবরত রক্তক্ষরণ হলেও পরিবারের কাউকেই এ তথ্য জানাননি কুলসুম বেগম (৩০)। যথাযথভাবে গর্ভপাত না হওয়ায় এ রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) দুপুরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে তাকে ভর্তি করেন স্বজনরা। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন কুলসুম।
কুলসুম বরগুনা সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের হেউলিবুনিয়া এলাকার শফিউল বাশারের স্ত্রী। এ দম্পতির ১৮ মাস বয়সী এক পুত্রসন্তান রয়েছে। নিছক অসচেতনতার কারণেই কুলসুম অকালে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে মনে করেন বরগুনার সচেতন মহল।
বিজ্ঞাপন
কুলসুমের ব্যবস্থাপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, গত সোমবার (১৫ মার্চ) থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয় কুলসুমের। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়লে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে কুলসুমকে ভর্তি করেন তার স্বজনরা। পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন কুলসুম।
এ বিষয়ে কুলসুমের দেবর মো. কামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি বাজারে থাকা অবস্থায় ভাবির অসুস্থতার খবর জানায় বাড়ির লোকজন। সঙ্গে সঙ্গে আমি বরগুনা থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠাই। পরে হাসপাতালে ভর্তি করার তার পাঁচ ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন বলে জানান চিকিৎসকরা। আমি একজন ডোনারও সংগ্রহ করে পাঠাই। কিন্তু রক্ত দেওয়ার আগেই ভাবি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ভাবির যে এ রকম রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, তা আমরা কেউই জানতাম না। যদি জানতাম, তাহলে আমরা আগেভাগেই তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতাম।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজ বলেন, নিছক অসচেতনতার কারণেই গৃহবধূ কুলসুম অকালে প্রাণ হারিয়েছেন। মাতৃত্বকালীন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসচেতনতা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি অনেক উদ্যোগের পরও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনো অসচেতন মানুষ রয়েছেন। তাই সচেতনতার এই কার্যক্রমটি আরও জোরদার করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স শিল্পী আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, একেবারে মুমূর্ষু অবস্থায় দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে কুলসুম বেগমকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর কর্তব্যরত চিকিৎসক কুলসুম বেগমকে পাঁচ ব্যাগ রক্ত দেওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু কুলসুম বেগমের রক্তের গ্রুপ জানা ছিল না।
এ ছাড়া এ হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংকও নেই। তাই কুলসুম বেগমের রক্তের গ্রুপ যাচাই করার পাশাপাশি রক্তদাতা সংগ্রহ করতে তার স্বজনদের সময় লেগে যায়। পরে তারা খোঁজাখুঁজির করে একজন রক্তদাতাও নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে মৃত্যুবরণ করেন কুলসুম, জানান তিনি।
মো. সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এনএ