হারুন প্রধান

বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ৪৬ কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ মামলার দ্বিতীয় আসামি হারুন অর রশিদ প্রধান ওরফে হারুন প্রধানকে (৫৫) পঞ্চগড় থেকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়ন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শনিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, মামলাটি ঢাকার ধানমন্ডি থানায় হয়েছিল। হারুন অর রশিদ প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। তাকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর দেবনগর এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

জানা যায়, গত বছর ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর রাতে ধানমন্ডি থানায় মামলাটি করেন বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজার আল মামুন। এ মামলায় বাবর মিয়াকে (৬০) প্রধান করে ১১ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলার দ্বিতীয় আসামি হলেন হারুন অর রশিদ। তিনি জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগরের সাতমেরা এলাকার মৃত গফুর উদ্দিন প্রধানের ছেলে। প্রধান আসামি বাবর মিয়া গাজীপুর কালিয়াকৈরের শ্রীফলতলীর বাসিন্দা মোখলেস উদ্দিনের ছেলে।

মামলার পর থেকে হারুন প্রধানসহ অনেকে আত্মগোপনে ছিলেন। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর হারুনকে তার নিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

মামলার বিবরণীতে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর সকালে বাবর মিয়া ও হারুন ঢাকায় বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানিকে ১৫০ একর জমি ক্রয় করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন ধাপে টাকা গ্রহণ করেন। হারুনসহ অন্য অভিযুক্তরা বিভিন্ন পরিমাণে মোট ১১৫ একর ২৪ শতক জমি বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভুয়া জমির মালিক দেখিয়ে নামে-বেনামে কাগজপত্র তৈরি করে বেক্সিমকো হোল্ডিং লিমিটেড, বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড ও করতোয়া সোলার লিমিটেড থেকে জমি ক্রয় বাবদ চাহিদা অনুযায়ী ৪৬ কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। 

ওই জমি করতোয়া সোলার লিমিটেড কোম্পানির পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের ১১১টি ভুয়া পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি ও করতোয়া সোলার লিমিটেডের নামে ৩১টি ভুয়া সাব-কাবলা দলিলের রেজিস্ট্রি দেখিয়ে বাস্তবে মাত্র ১৬ একর জমি কোম্পানিকে বুঝিয়ে দেয়। প্রতারণামূলকভাবে আসামিরা তাদের নামে-বেনামে ও তাদের বিভিন্ন কোম্পানি ও ফার্মের নামে ৪৬ কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এদিকে হারুন প্রধানকে আটকের খবরে ওই এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছে এলাকাবাসী।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তারুল হক মুকু বলেন, হারুন প্রধান একজন ভূমিদস্যু। তার অত্যাচারে স্থানীরাও রেহাই পায়নি। সে গ্রেপ্তার হওয়ার পর আমার পৈতৃক সম্পত্তি গতকাল শুক্রবার উদ্ধার করেছি। সে জমি কিনে দেওয়ার নাম করে বেক্সিমকো কোম্পানির কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা আত্মসাৎ করেছে। তার গ্রেপ্তারের খবর জানতে পেরেই এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছি।

এ বিষয়ে মামলার বাদী বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজার আল মামুন ঢাকা পোস্টকে জানান, আমরা বেক্সিমকো কোম্পানি কর্তৃক জমি ক্রয়ের জন্য যাদেরকে টাকা দিয়েছিলাম, তারা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া মালিকানা দেখিয়ে কাগজপত্র সৃষ্টি করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। সেই মামলায় গত বৃহস্পতিবার একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এসকে দোয়েল/আরকে