ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মাঝকান্দী এলাকায় নয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সৎ ছেলেকে আসামি করে মামলা করেছেন বাবা। পাশাপাশি এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী বাবা ও সৎ ছেলেকে একটি বিদ্যালয়ের কক্ষে আটকে মারধর করার ঘটনায় তিনি আরেকটি মামলা করেছেন।

জানা যায়, গত ১৭ মার্চ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মধুখালী উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নে নয় বছরের স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ এনে বাবা (৪০) ও শিশুটির সৎ ভাইকে (১৪) একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষে আটকে মারধর করেন এলাকার সাত-আটজন ব্যক্তি। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায় কয়েকজন ব্যক্তি বাবা ও ছেলেকে মারধর করছেন। পরে মধুখালী থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বাবা ও ছেলেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

মধুখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক তদন্তে কিশোরের বিরুদ্ধে তার সৎ বোনকে ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও বাবার বিরুদ্ধে মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় গত ২১ মার্চ বাবা বাদী হয়ে তার সৎ ছেলেকে আসামি করে ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় কিশোরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত ২২ মার্চ আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি শিশুটির শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়েছে এবং শিশুটি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

একই দিন (২১ মার্চ) শিশুটির বাবা তার সৎ ছেলেসহ তাকে মারধরের ঘটনায় আরেকটি মামলা করেছেন। এ মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও সাত-আটজনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মো. কুতুবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন মধুখালী থানা পুলিশের এই কর্মকর্তা।

পুলিশ জানায়, ধর্ষণের শিকার শিশুটি মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের সালামতপুর গ্রামের বাসিন্দা। শিশুটির মা মারা গেছেন। শিশুটির বাবা আগে আরেকটি বিয়ে করেন। সেই স্ত্রীর ১৪ ও ১১ বছর বয়সী দুই ছেলে রয়েছে। ওই স্ত্রী বর্তমানে বিদেশে থাকেন। শিশুটির বাবা ঝিনাইদহে একটি পাটকলে কাজ করেন। মধুখালির জাহাপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে সৎ দুই ভাইয়ের সঙ্গে শিশুটি থাকে এবং স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। শিশুটির বড় সৎ ভাই জাহাপুর ইউনিয়নে একটি পাটকলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শিশুটির মা নেই, সে তার বাবার সঙ্গে মাঝকান্দী গ্রামে একটি ভাড়া বাসায় থাকে। বাবা সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজের জন্য বাড়ির বাইরে থাকেন। এই সুযোগে শিশুটির সৎ ভাই (১৪) জোরপূর্বক তার সঙ্গে প্রতি রাতে অসামাজিক কাজ করে। প্রতি রাতে শিশুটির ঘর থেকে তার কান্নার আওয়াজ শোনা যায়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়রা কৌশলে শিশুটির বাবা ও সৎ ভাইকে সংবাদ দিয়ে এনে একটি বিদ্যালয়ে আটকে রেখে মারধর করে পুলিশে খবর দেন।

জহির হোসেন/এমজেইউ