বিশ্বম্ভরপুরে এক পাগলা কুকুরের কামড়ে শিশুসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার কৃষ্ণনগর, রাধানগর, শ্রীধরপুর, বিশ্বম্ভরপুর গ্রাম ও বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে এ ঘটনা ঘটে।

এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। গেল ২৪ ঘণ্টায়ও কুকুরটিকে নিষ্ক্রিয় করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষকে কামড়েছে একটি পাগলা কুকুর। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার ছিল বিশ্বম্ভরপুর বাজারে সাপ্তাহিক হাটবার। ফলে গতকাল হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছে বাজারে। এখন সবাই আতঙ্কে আছে

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়,  বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বিশ্বম্ভরপুর বাজারে, বাদাঘাট দক্ষিণ ইউনিয়নের শ্রীধরপুর, উপজেলা সদরের নতুনপাড়া রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মী ও শিশুসহ ১০ জন কুকুরের কামড়ে আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যকর্মী জীবন কৃষ্ণ চৌধুরী (৫০), ফতেপুর ইউনিয়নের কৌয়া গ্রামের বিধান বিশ্বাসের ছেলে নীরব (১০), বিশ্বম্ভরপুর গ্রামের শ্যামল বিশ্বাসের ছেলে মাধব বিশ্বাস (৪), শ্রীধরপুর গ্রামের আব্দুল গফ্ফারের ছেলে কামাল উদ্দিন (২৭), চিনাকান্দির সিলদোয়ার গ্রামের আব্দুল আলীর ছেলে মারুফ (৯), শ্রীধরপুর গ্রামের রবীন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে বিষ্ণু বিশ্বাস (৩০), মুক্তিখলা গ্রামের তফাজ্জল হোসেন (৩৮), শ্রীধরপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বিশ্বাসের ছেলে নির্মল বিশ্বাস (১০), চান্দারগাঁও গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে রবিউল আউয়াল (২৭) ও হবিবনগরের গ্রামের মৃত্য আবুল হোসেনের ছেলে মো. আবুল করিম (৬০) রয়েছেন।

এলাকাবাসী জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষকে কামড়েছে একটি পাগলা কুকুর। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার ছিল বিশ্বম্ভরপুর বাজারে সাপ্তাহিক হাটবার। ফলে গতকাল হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছে বাজারে। এখন সবাই আতঙ্কে আছে।

সন্ধ্যার দিকে এ পাগলা কুকুর বাজারে প্রবেশ করে। এ সময় বাজারে হইচই শুরু হয়। যাকে সামনে পেয়েছে কামড়েছে কুকুরটি। এ সময় বৃদ্ধ ও শিশুরা বেশি শিকার হয়েছেন।

কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা ধরণী বর্মণ বলেন, আমরা আতঙ্কে রয়েছি। কখন এ পাগলা কুকুর আবার আসে। আমরা চাই কুকুরটি ধরে নিষ্ক্রিয় করা হোক।

বিশ্বম্ভরপুরের বাসিন্দা স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, পাগলা কুকুরটা দেখতে বাঘের মতো। স্বাভাবিক কুকুরের ছেয়ে কিছুটা বড়। গতকাল যাকেই সামনে পেয়েছে কামড়েছে।

এই পর্যন্ত ১০ জন কুকুরে কামড়ানো রোগী হাসপাতালে এসেছেন। একজন এখনো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। একজন শিশুকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে

আবুল বাশার মো. ওসমান হায়দার মজুমদার, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা

একই গ্রামের বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন গোস্বামী বলেন, বাড়ির শিশুরা ভয়ে আছে। কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছে না। বাজারেও যাচ্ছে না। এখনো প্রশাসন কুকুরটিকে ধরতে পারছে না।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন আশিকুজ্জামান ঢাকাপোস্টকে বলেন, আমি এখন ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণে রয়েছি। তবে ভ্যাকসিন দেওয়ার দায়িত্ব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। কুকুর এমনিতে মারা যাবে না। তবে কারো ক্ষতি করলে যে কেউ কুকুরকে হত্যা করতে পারবে।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আবুল বাশার মো. ওসমান হায়দার মজুমদার ঢাকাপোস্টকে জানান, এই পর্যন্ত ১০ জন কুকুরে কামড়ানো রোগী হাসপাতালে এসেছেন। একজন এখনো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। একজন শিশুকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালে ভ্যাকসিন আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের হাসপাতালে কোনো ভ্যাকসিন নেই। যারা আসছেন, তাদের ব্যবস্থাপত্রে সব লিখে দিয়েছি। বাইরে থেকে হয়তো কিনবেন তারা। সবাই ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য নিশ্চিত করতে পারেননি এই কর্মকর্তা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাদিউর রহিম জাদিদ ঢাকাপোস্টকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় আমরা খবর পেয়েছি। বাজার কমিটির সভাপতিকে বলা হয়েছে কুকুরটিকে ডিসপোজাল করার জন্য। এখনো কুকুরটিকে ধরতে পারেনি। তবে শিগগির কুকুরটিকে ডিসপোজাল করা হবে।

কুকুড়ে কামড়ানো ব্যক্তিদের ভ্যাকসিন দেওয়া নিশ্চিতকরণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কামড়ের শিকার হয়ে যারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি গেছেন, তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। ভ্যাকসিন না নিয়ে থাকলে আমরা ব্যবস্থা করে দেব।

এনএ