শসা চাষে সফল আনোয়ার, ইউরোপে রপ্তানির আশ্বাস
শসা ও তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন শরীয়তপুরের কৃষক আনোয়ার ব্যাপারী। আগে ধান, পাট ও সরিষা চাষ করলেও উৎপাদন খরচ বেশি, ফলন পেতে দীর্ঘ সময় ও দাম কম হওয়ায় গত তিন বছর ধরে শসা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তিনি। ইউটিউব দেখে শসা চাষ শুরু করে অল্প সময়ে সফলতা অর্জন করে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন জেলার ডামুড্যা উপজেলার পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়নের নওগাঁ গ্রামের কৃষক আনোয়ার। স্থানীয় কৃষি অফিস বলছে, আনোয়ারের উৎপাদিত শসা ইউরোপে রপ্তানি করার জন্য তাকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।
কৃষক আনোয়ার ব্যাপারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউটিউবের বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখে সাবিরা জাতের শসা চাষ শুরু করেছি। এই জাতের শসার ফলন অন্য জাতের তুলনায় অনেক বেশি হয়। গাছে ভাইরাস আক্রমণ করে কম, রোগবালাইও কম হয়। গতকাল আমি ক্ষেত থেকেই শসা বিক্রি করেছি এক হাজার টাকা মণ। ধান বাজারে নিলে এক হাজার টাকা বিক্রি করা যায় না। এক মণ ধান উৎপাদনে ৭০০ টাকা খরচ যায়। সাবিরা জাতের শসা ১ শেডে উৎপাদন হয় ১ মণ। আমার আটটি শেড আছে। এই আটটি শেড করতে আমার ১০ শতাংশ জমির প্রয়োজন হয়েছে। আমি মোট খরচ করেছি ১৫ হাজার টাকা। প্রতি তোলায় আমার আট হাজার টাকা আসবে। এক মৌসুমে পাঁচ থেকে ছয় বার শসা তোলা যায়।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, শসায় কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। জৈব সার ব্যবহার করি। আমার উৎপাদিত শসা খেলে কোনো রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
বিজ্ঞাপন
গ্রিন বিউটি জাতের শসা চাষ নিয়ে আনোয়ার ব্যাপারী বলেন, গ্রিন বিউটি শসা অল্প চাষ করেছি। আমি নিজেই পরাগায়ণ করি। এলাকা থেকে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি। ক্ষেত থেকেই পাইকাররা এসে শসা কিনে নিয়ে যায়। বাজারে যেতে হয় না। শসা চাষ করে আগের থেকে অনেক ভালো আছি।
তিনি আরও বলেন, আমার বেশি জমি নেই, টাকা নেই। যদি জমি আর টাকার ব্যবস্থা হতো, তাহলে আমি আমার শসা ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানি করতে পারতাম। আমার শসা ইউরোপে সুনামের সঙ্গে বিক্রি হতো। কারণ আমার শসায় কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না।
এছাড়া গোল্ডেন কাউন জাতের তরমুজ চাষ নিয়ে আনোয়ার ব্যাপারী বলেন, গত বছরও আমি ৪০ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম। ৯০ হাজার টাকা খরচ করে আমি দুই লাখ ৩০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছিলাম। এ বছর তরমুজে ভালো ফলনের আশা করছি। কিন্তু সব জিনিসপত্রের দাম বেশি। গত বছর যে বীজ আমি ৭০০ টাকায় কিনেছি, সেই বীজ এ বছর এক হাজার ৪০০ টাকায় কিনতে হয়েছে। সার, ওষুধসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। এ বছর খরচ বেশি বলে আমি ফসলের দামও বেশি চাইব। এতো দাম হলে তো দশ টাকা নিয়ে ঘরে যাওয়া যায় না। তবে আমার আশা, গত বছরের মতো লাভবান হতে পারব।
আনোয়ারের শসা চাষে সহায়তা করেন ভাতিজা মামুনুর রহমান (২০)। আনোয়ারের পরিবারের সঙ্গে মামুনের পরিবারও বেশ ভালোই চলছে। মামুনুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আব্বু মারা যাওয়ার পরে চাচার সঙ্গে কৃষি কাজ শুরু করেছি। সাবিরা জাতের শসা চাষ করছি। শসায় ভালো ফলন হয়েছে। বিক্রিও ভালো। আগামী বছর জমির পরিমাণ বাড়ানোর ইচ্ছে আছে। শসা চাষে কষ্ট কম, ফলন বেশি। এছাড়া লাভও ভালো হয়।
বৃদ্ধ কৃষক আব্দুল মতিন ব্যাপারী (৭০) বলেন, আমি যদি বৃদ্ধ না হতাম, গায়ে শক্তি থাকত তাহলে আনোয়ারের মতো শসা চাষ করতাম। আগে আমরা ধান, পাট চাষ করেছি। কিন্তু আনোয়ারের মতো লাভবান হতে পারিনি। ধান ও পাটের নিরানি দিতেও অনেক কষ্ট হয়েছে। গায়ে এখন আর শক্তি নেই। মাঝেমধ্যে এসে দেখি আনোয়ারের শসা, তরমুজ চাষ। যদি গায়ে শক্তি থাকত আমি আবার চাষাবাদের চিন্তা করতাম। আনোয়ারের জন্য আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তার ফসল যেন আরও বেশি ভালো হয়।
আনোয়ারের আরেক সহকারী মনির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমার জায়গা জমি নেই বলে আমি চাষ করতে পারি না। এখন আনোয়ার চাষ করে, আমি তার শসা চাষে সহযোগিতা করি। মাঝেমধ্যে পরিবারের লোকদের নিয়ে শসা খাই। সাবিরা ভালো জাত। উৎপাদনে খরচ কম। খেতেও সুস্বাদু। সাবিরা জাতের শসার মৌসুম শেষ হলে করলা, বরবটিসহ অন্যান্য ফসলও একই খরচে চাষ করা যায়।
ডামুড্যা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. মোতালেব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কৃষক আনোয়ার ব্যাপারী অত্যন্ত উদ্যমী ও আগ্রহী। আমরা তাকে এ বছর তরমুজের প্রদর্শনী দিয়েছি। আনোয়ার খুব ভালো মানের শসা উৎপাদন করে। তার উৎপাদিত শসা ইউরোপে রপ্তানি করার জন্য যেভাবে তাকে গড়ে তোলা দরকার সেভাবে গড়ে তুলেছি। আধুনিক চাষাবাদ ও নিরাপদ ফসল উৎপাদন সরকারের মূল লক্ষ্য। আনোয়ারের শসা বিদেশে রপ্তানির জন্য শিগগিরই ক্রেতাদের সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেব।
এবিএস