মুকুল বিষপান করেন সেচের পানি না পেয়ে, বিশ্বাস করছে না তদন্ত কমিটি
কৃষক মুকুলকে অর্থ সহায়তা করছেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন আদিবাসী কৃষক মুকুল সরেন (৩৫)। কৃষক তার আত্মহত্যা চেষ্টার কারণ হিসেবে জমিতে সেচের পানি না পাওয়াকে দায়ী করলেও তদন্ত কমিটি বলছে হতাশা ও ভিন্ন কারণে তিনি এমনটি ঘটিয়েছেন।
গত রোববার (৯ এপ্রিল) বিকেলে দেওপাড়া ইউনিয়নের বর্ষাপাড়ার গোপাল সরেনের ছেলে মুকুল সরেন বিষপান করেন। এরপর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এই ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে রাজশাহী জেলা প্রশাসক। সেই কমিটির আহ্বায়ক হলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত। অন্য সদস্যরা হলেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান ও দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল।
বিজ্ঞাপন
আত্মহত্যা চেষ্টার কারণ জানতে চাইলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কৃষক মুকুল সরেন সাংবাদিকদের বলেন, ৮ থেকে ৯ দিন ধরে আমাকে ঘুরিয়ে পানি দেয়নি। অপারেটর হাসেম আলীর সঙ্গে কথাকাটাকাটির পর আমি বিষপান করি। তবে বিষপানের ঘটনার পর হাসেম আলী তার জমিতে ১৫ মিনিট সেচ দিয়েছেন বলে জানা যায়।
এদিকে মুকুলের বিষপানের খবর সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে আসার পর রাতেই তাকে দেখতে রামেক হাসপাতালে যান জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ। মুকুল ডিসির কাছেও একই অভিযোগ করেন। ডিসি সুস্থ হওয়ার পরে মুকুলকে তার কার্যালয়ে ডাকেন এবং সব সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন। তিনি মুকুলকে তার মোবাইল নম্বর দিয়ে কোনো সমস্যা হলে কল করারও পরামর্শ দেন।
বিজ্ঞাপন
এর আগে মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে কমিটির সদস্যরা ঈশ্বরীপুর গ্রামে গিয়ে ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত করেন। এ সময় বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ, গোদাগাড়ী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলামসহ বিএমডিএর অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। তারা অপারেটর হাসেম এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বললেও মুকুলের সেচের পানি না পেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার দাবি মেনে নিতে পারছেন না।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাঠে গিয়ে সব কৃষকের জমিতেই পানি দেখা গেছে। মুকুল সরেনের জমিতেও পানি আছে। একজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কৃষক ছাড়া কেউ বলেনি পানি পেতে হয়রানি হয়েছে। তাই সেচের জন্য মুকুল বিষপান করেছে এটা মনে হচ্ছে না। এর পেছনে অন্য কোন কারণ হতে পারে। তদন্তকালে প্রাথমিকভাবে দুটি বিষয় উঠে আসছে। একটি হলো- সন্তানদের রেখে মুকুলের স্ত্রী তিন মাস আগে বাড়ি ছেড়েছেন। এছাড়া গত বছর দুই কৃষক বিষপানে মৃত্যুর পর চাকরিচ্যুত হওয়া অপারেটরেরও কোনো যোগসূত্র থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, মুকুল সেচের পানির জন্য বিষপান করেছে বলে মনে হচ্ছে না। মুকুলের বিষপানের পেছনে অন্য কারণ আছে। আমরা সেটা তদন্ত করে দেখব।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিনি এখন সুস্থ আছেন। আমাদের ধারণা তারমধ্যে হতাশা কাজ করছে। তার স্ত্রী সন্তানদের রেখে চেলে গেছেন। আমরা তার জমি সেচ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করব। তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তিনি সকালে আমার সঙ্গে অফিসে এসে দেখা করে গেছেন। তাকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের মার্চে বোরো ধানের জমিতে পানি না পেয়ে এই নিমঘটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি বিষপান করেন। এতে দুজনেরই মৃত্যু হলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। অভিনাথ ও রবি বিএমডিএর গভীর নলকূপের আওতায় জমি চাষ করতেন, সেই একই নলকূপের আত্তাধীন হলেন কৃষক মুকুল সরেন। অভিনাথ ও রবির মৃত্যুর পর পরিবারের পক্ষ থেকে তৎকালীন গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এনিয়ে সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। ওই সময় চাকরিচ্যুত হন সাখাওয়াত। পরে নিয়োগ পান বর্তমান অপারেটর হাসেম আলী বাবু।
শাহিনুল আশিক/আরকে