পেরিয়েছে তিন দশক, তবুও হয়নি বিসিক শিল্পনগরী
কথা ছিল কর্মব্যস্ত একটি শিল্পনগরী হবে। শ্রমিকরা কাজ করবেন দিবারাত্রী। প্রসার ঘটবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের। কিন্তু সেই আশা তিন দশক ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় শিল্প নগরী গড়তে জমি অধিগ্রহণের পর পেরিয়ে গেছে তিন দশকেরও বেশি সময়। কিন্তু বাস্তবে সেই জমিতে শিল্পনগরী হওয়ার পথে হয় কলা চাষ, চড়ানো হয় গরু। বহু আশার বিসিক শিল্প নগরী বাস্তব রূপ না পাওয়ায় ব্যবসায়ীদেরও ক্ষোভ রয়েছে।
ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের পাশে মুক্তাগাছা উপজেলার সাতাশিয়া এলাকায় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তুলতে ১৯৯১ সালে ৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তৎকালীন সময়ে ১৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকায় জমি ক্রয় করা হয়। পরে এ জমিতে মাটি ভরাটের কাজও করা হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় ২৭ লাখ টাকা। সরকারের বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করা হলেও এরপর আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে।
বিজ্ঞাপন
বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে বিশাল খালি জায়গা। দীর্ঘ সময় পরেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় এলাকাবাসী এখন কলা চাষ করছে শিল্পনগরীর নির্ধারিত খালি জায়গায়। রাতের আঁধারে হচ্ছে অনৈতিক কার্যকলাপ, বসে মাদক-জুয়ার আসর। এভাবেই চলছে দিনের পর দিন। কবে নাগাদ এর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে এটাও এখন অনিশ্চিত। অথচ বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার সব ধরনের সুবিধা রয়েছে এ এলাকায়।
সেখানে ঘুরে দেখা গেছে, জমি অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাটের বিশাল এ মাঠ এখন গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। মাছ ব্যবসায়ীরা ড্রাম ফেলে ও ড্রামে পানি ভরাটের কাজ করেন মাঠে। বাঁশের বেড়া দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে কলা বাগান ও বিভিন্ন ফসলের আবাদ। ক্রমেই এর জয়গা এখন ছোট হয়ে আসছে। অথচ গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সব ধরনের সুবিধা রয়েছে বিসিক শিল্প নগরীর এলাকায়। এর সঙ্গে ঢাকাসহ উত্তরবঙ্গের সব ধরনের যোগাযোগের ব্যবস্থাও রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মুক্তাগাছা বন্যামুক্ত অপেক্ষাকৃত উঁচু একটি এলাকা। শিল্পনগরী গড়ের তোলার অনূকূল পরিবেশও রয়েছে এটিকে ঘিরে। এতো কিছুর পরও জমি অধিগ্রহণের দীর্ঘ ৩২ বছর পার হলেও এটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। এতে স্বাভাবিকভাবেই পিছিয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন। পাশাপাশি বিসিকের সব ধরনের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন বলেন, যৌবনকাল থেকে শুধু শুনেই আসছি এই জায়গায় শিল্প প্রতিষ্ঠান হবে অথচ এখন বৃদ্ধ বয়সেও এর বাস্তবায়ন দেখছি না। যে যার মতো জমি ব্যবহার করছে। ফলে আগের জায়টাই এখন নাই।
সাতাশিয়া এলাকার ব্যবসায়ী রফিজ মিয়া বলেন, জমি অধিগ্রহণের পরও বিসিক শিল্পনগরী গড়ে না উঠায় এ এলাকার ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা এখন হতাশ। তবুও চাই দ্রুত এর বাস্তবায়ন।
মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুৎফর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। আমি নতুন এলেও এর খোঁজ খবর নিচ্ছি। বিসিক শিল্পনগরী বাস্তবায়নে ঊর্ধ্বতন মহলে কথা বলবো। আশা করছি অল্প সময়ের ভেতরে এর কার্যক্রম শুরু করা হবে।
ময়মনসিংহের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুস ছালাম বলেন, রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট ও দুটি গেটের জন্য বাজেট চাওয়া হয়েছে, সেটা অনুমোদন হলেই আমরা কাজ শুরু করবো। এখানে ৩৮টি প্লট হবে। প্লট নিতে যারা ইচ্ছুক ইতোমধ্যে সেসব ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আমরা আবেদনও সংগ্রহ করা শুরু করেছি।
উবায়দুল হক/এমএএস