কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ায় বিতাড়িত সেই মায়ের আদালতে মামলা
আদালতে নবজাতকসহ মা রোকসানা খাতুন
কন্যাসন্তান জন্ম হওয়ায় প্রসূতি মাকে বাড়িতে উঠতে না দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে এবার আদালতের দারস্থ হয়েছেন রোকসানা খাতুন (২৩)। স্বামী রাজা মিয়াকে প্রধান আসামি করে শ্বশুর-শাশুড়িসহ পাঁচজনের নামে মামলা করেছেন তিনি।
রোববার (২১ মার্চ) দুপুরে গাইবান্ধা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক আবদুর রহমানের আদালতে হাজির হয়ে ১৩ দিনের শিশুকে কোলে নিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে মামলার আবেদন করেন। পরে আদালতের বিচারক শুনানি শেষে মামলাটি আমলে নিয়ে সাদুল্যাপুর থানা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
বিজ্ঞাপন
বাদী রোকসানার আইনজীবী হাসিবুল ইসলাম হ্যাপি ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বামীর বাড়িতে অবস্থান করতে না দিয়ে শিশুসহ রোকসানাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এরআগে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ২ লাখ টাকা যৌতুক না পেয়ে তাকে নির্যাতন করেন।
তিনি আরও বলেন, বিচারক সাদুল্যাপুর থানা পুলিশকে আগামী ২১ এপ্রিলের মধ্যে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করছি, পুলিশ মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত করবে। রোকসানা তার ন্যায্য বিচার পাবেন।
বিজ্ঞাপন
নবজাতককে কোলে নিয়ে গৃহবধূ রোকসানা খাতুন বলেন, ‘আমার মতো কেউ যেন কন্যাসন্তান জন্ম দিয়ে এভাবে স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত না হয়। কেউ যেন এভাবে নির্যাতনের শিকার না হয়। আমি যদি আমার সন্তানের পিতৃপরিচয় দিতে না পারি; তবে আমি স্বামী রাজা মিয়ার ফাঁসি চাই।’
রোকসানার মামা আবদুল লতিফ বলেন, ‘যৌতুকের জন্য আমার ভাগনিকে অমানবিক নির্যাতন করা হতো। চারদিনের কন্যাশিশুসহ তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন রোকসানার স্বামী বলছেন, তারা না কি আমার রোকসানাকে তালাক দিয়েছেন। কন্যাশিশু জন্ম দেওয়ার কারণেই তারা রোকসানাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এর আগে, গত ৮ মার্চ গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের নলডাঙ্গা ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রামে স্বামীর বাড়িতে প্রসব বেদনা উঠলে রোকসানাকে রংপুরের একটি ক্লিনিক নেওয়া হয়। সেখানে একটি কন্যাশিশুর জন্ম দেন রোকসানা। ক্লিনিকে চারদিন থাকার পর ১১ মার্চ কন্যাসন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে আসেন রোকসানা।
কিন্তু কন্যাসন্তান জন্ম হওয়ায় রোকসানাকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেননি শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের লোকজন। এ সময় বাড়ির মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে চলে যান শ্বশুর-শাশুড়ি। জানিয়ে দেওয়া হয় তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে। পরে কোনো উপায় না পেয়ে রোকসানা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সুন্দরগঞ্জের সর্বানন্দ ইউনিয়নের ধনকুড়ি গ্রামের বাবার বাড়িতে নিয়ে যায়।
রিপন আকন্দ/এমএসআর