তৃতীয় লিঙ্গের স্বর্ণালীর গলায় রশি পেঁচিয়ে টেনেহিঁচড়ে নির্যাতন
হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন স্বর্ণালী
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় দলের সদস্য না করায় মহুয়া আক্তার স্বর্ণালী (৩০) নামের তৃতীয় লিঙ্গের এক দলনেতার গলায় রশি পেঁচিয়ে টেনেহিঁচড়ে নির্যাতন করা হয়েছে।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে স্বর্ণালী সদর হাসপাতালের ছয়তলায় মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২০ মার্চ) রাত ৮টার দিকে উপজেলার লাউড়েরগড় হয়রত শাহ আরেফিন (রহ.) আস্তানার পাশে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে স্বর্ণালীর স্বজনেরা জানান।
স্বর্ণালী তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া এলাকার বাসিন্দা। তৃতীয় লিঙ্গের হওয়ায় পরিবার থেকে আলাদা হয়ে লাউড়েরগড় হয়রত শাহ আরেফিন (রহ.) আস্তানার পাশে বাড়ি তৈরি করে বসবাস করেন। একপর্যায়ে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের নিয়ে সংগঠন গড়েন। সংগঠনের সদস্য হতে চেয়েছিল স্থানীয় হারিছ উল্লাহসহ কয়েকজন যুবক। কিন্তু সদস্য করেননি স্বর্ণালী। এতে ক্ষুব্ধ হন হারিছ ও তার সহযোগীরা।
বিজ্ঞাপন
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার রাত ৮টায় হারিছ ও তার সহযোগীরা যাদুকাটা নদী থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন করতে কোম্পানি কমান্ডারের কাছে স্বর্ণালীকে সুপারিশ করতে বলেন। সুপারিশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন স্বর্ণালী। এ নিয়ে তর্কবিতর্ক হয়।
একপর্যায়ে স্বর্ণালীর ওপর হামলা চালান হারিছ ও তার সহযোগীরা। পরে স্বর্ণালীর গলায় রশি বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে দূরে ফেলেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানায়, স্বর্ণালীকে মারধর করেছেন হারিছ উল্লাহ, মনির হোসেন, জমাতুল, ইকবাল, বিল্লাল, হাবিবুর, জলিল ও রব মিয়াসহ কয়েকজন। তারা তৃতীয় লিঙ্গের নয়; তবু তৃতীয় লিঙ্গের দাবি করে গ্রুপ তৈরি করেছেন।
উত্তর বড়দল ইউনিয়নের রামেশ্বরপুর গ্রামের বাসিন্দা নবী নুর বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম। স্বর্ণালীর গলায় রশি পেঁচিয়ে মারপিট করায় প্রতিবাদ করেছি। এ সময় হারিছ ও তার সহযোগীরা আমাকে তালাবদ্ধ ঘরে আটকে রাখেন।
তৃতীয় লিঙ্গের মাসুক বলেন, হারিছ ও তার সহযোগীরা ট্রান্সজেন্ডার নয়। তারা বালু উত্তোলন ও চাঁদাবাজি করার জন্য তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সেজেছে। যাদুকাটা নদী থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন করে তারা। বালু ও পাথর উত্তোলনে আমরা সবসময় প্রতিবাদ করি। কোম্পানি কমান্ডারের কাছে স্বর্ণালী সুপারিশ না করায় মারপিট করেছে তারা।
তৃতীয় লিঙ্গের পারভেজ আহমদ বলেন, হারিছ ও তার সহযোগীরা তৃতীয় লিঙ্গের না হয়েও তৃতীয় লিঙ্গের সেজে নানা অপকর্ম করে বেড়ায়। এসব থেকে বিরত থাকতে বলায় ক্ষিপ্ত হয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তারা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা মিয়া বলেন, হারিছ উল্লাহ, মনির হোসেন, জমাতুল, ইকবাল, বিল্লালসহ আরও কয়েকজন স্বর্ণালীকে বেধড়ক মারধর করেছে। স্বর্ণালীকে মারধরের পর আমরা সবাই বসে বিষয়টির সমাধান দিয়েছি। স্বর্ণালীর চিকিৎসা খরচ চালাতে বলেছি।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাইদুর রহমান আসাদ/এএম