মোটর যন্ত্রাংশ ও প্রসাধনী আনতে পারবেন আখাউড়ার ব্যবসায়ীরা
শুটকি, ফুলের ঝাড়ু আর আগরবাতির মতো কম চাহিদা সম্পন্ন পণ্য আমদানির অনুমতি থাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে আগ্রহী ছিলেন না ব্যবসায়ীরা। এর ফলে সরকারও এ বন্দর থেকে রাজস্ব পায় না। পণ্য রফতানির বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রার রেমিট্যান্স পেয়ে থাকে। তবে এবার শতভাগ রফতানিমুখী এ বন্দর দিয়ে সবধরনের পণ্য আমদানির সুযোগ পেতে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে আগামী জুন অথবা জুলাই মাস থেকে ভারত থেকে মোটর যন্ত্রাংশ ও প্রসাধনী সামগ্রীর মতো উচ্চ চাহিদা সম্পন্ন সকল পণ্য আমদানি শুরু করবেন আখাউড়ার ব্যবসায়ীরা।
বিজ্ঞাপন
মূলত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সকল পণ্য আমদানির অনুমতির বিষয়ে সুরাহা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে করে ঝিমিয়ে পড়া আখাউড়া স্থলবন্দর আবারও চাঙা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ১৯৯৫ সাল থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় পণ্য রফতানি শুরু হয়। এরপর ২০১০ সালের ১৩ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে যাত্রারাম্ভ করে আখাউড়া স্থলবন্দর।
বিজ্ঞাপন
প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে কয়েক কোটি টাকার পাথর, রড, সিমেন্ট, মাছ, প্লাস্টিকসহ অর্ধশত পণ্য রফতানি করা হতো। এজন্য এটিকে শতভাগ রফতানিমুখী স্থলবন্দর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তবে বছর তিনেক ধরে ত্রিপুরার সঙ্গে অন্যান্য রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমতে থাকে। আগে দিনে ১০ থেকে ১২ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের অর্ধশত পণ্য রফতানি হলেও এখন গড়ে প্রতিদিন ৩ লাখ ডলারের হাতে গোনা কয়েকটি পণ্য যাচ্ছে ভারতে। এর ফলে বন্দরকে আবার আগের মতো চাঙা করতে ভারত থেকে নিষিদ্ধ পণ্য ব্যতিত উচ্চ চাহিদা সম্পন্ন সকল পণ্য আমদানির অনুমতি দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন ব্যবসায়ীরা।
কারণ এ বন্দর দিয়ে ফুলের ঝাড়ু ও আগরবাতির মতো কম চাহিদা সম্পন্ন পণ্য আমদানির অনুমতি ছিল। এর ফলে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করতেন না। বছরে দু-একবার কিছু পণ্য আমদানি হলেও এখনও পর্যন্ত রফতানি বাণিজ্যের ওপর ভর করেই চলছে আখাউড়া স্থলবন্দর।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, মূলত ২০১৭ সাল থেকে রফতানি বাণিজ্যে ধস নামতে থাকে। আগে রড, সিমেন্ট, পাথর, মাছ, শুটকি, প্লাস্টিক ও কয়লাসহ অর্ধশত পণ্য রফতানি হতো। কিন্তু এখন রফতানির পরিমাণের সঙ্গে রফতানিকৃত পণ্যের তালিকাও ছোট হয়ে এসেছে। এখন শুধুমাত্র মাছ, রড, ভোজ্য তেল, প্লাস্টিক ও তুলা রফতানি হচ্ছে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সুয়েব ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রাজীব উদ্দিন ভূইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, রফতানি বাণিজ্যে ধস নামার কারণে আমরা নিষিদ্ধ পণ্য ব্যতিত সকল পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আমাদের কাছে খবর পাঠিয়েছেন ভারত থেকে সকল পণ্য আমদানির অনুমতির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন এটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আছে। আশা করছি সেখানকার প্রক্রিয়া শেষ করে খুব দ্রুত গ্যাজেট হবে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আইনমন্ত্রী মহোদয় আমাদের আশ্বস্ত করেছেন তিনি আমাদের সকল পণ্য আমদানির অনুমতি পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন। সকল দাফতরিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অনুমোদনের বিষয়টি এখন প্রজ্ঞাপন জারির পর্যায়ে রয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী জুন-জুলাই মাস থেকেই ভারত থেকে পণ্য আমদানি শুরু করতে পারব।
তবে আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, পণ্য আমদানির বিষয়ে দাফতরিকভাবে আমরা কিছু জানি না। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শুনেছি পণ্য আমদানি শুরু হবে। পণ্য আমদানি হলে রাজস্ব আদায়সহ অন্যান্য দাফতরিক প্রক্রিয়ার ব্যাপারে আমরা প্রস্তুত আছি।
আজিজুল সঞ্চয়/এমএএস