শসা চাষে দ্বিগুণ লাভ, আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের
শসা
উত্তরাঞ্চলের শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত সিরাজগঞ্জ ও চলনবিল এলাকা। বর্তমানে শসার ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। দেখছেন রঙিন স্বপ্ন।
চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও উল্লাপাড়ায় উৎপাদিত শসা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর, পাবনার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়ায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের শসা চাষ করা হয়েছে। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এবং বীজ, সার, কীটনাশক সুলভমূল্যে পাওয়ায় শসার বাম্পার ফলন হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতি বিঘা জমিতে শসা চাষ করতে ১২-১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আর প্রতি বিঘা জমি থেকে উৎপাদিত শসা বিক্রি হয় ৩৫-৪০ হাজার টাকা। শসা চাষে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় দিন দিন কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০ বছর আগে চলনবিলের তাড়াশ, নাটোরের সিংড়া ও বগুড়ার শেরপুরের কৃষকদের উৎপাদিত শসা বেচাকেনার জন্য তাড়াশ উপজেলার দিঘরিয়ায় একটি আড়ত চালু হয়। সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও বগুড়া জেলার শসা চাষিরা এখানে শসা বিক্রি করতে আসেন। শসা পরিবহনের জন্য সব সময় ৪০ থেকে ৫০টি ট্রাক সর্বদা প্রস্তুত থাকে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে আড়তটিতে শুরু হয় বেচাকেনা। মহাজনরা শসা কিনে ট্রাকে লোড দিতে থাকেন। আর তাদের এ কাজে সহযোগিতা করার জন্য নিয়োজিত থাকেন ৩৫/৪০ জন শ্রমিক।
কথা হয় একজন আড়তদারের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে সপ্তাহের দুই দিন হাট বসে। হাটে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি শসা আমদানি হয়। এ সময় ওজনের পরিবর্তে বস্তা চুক্তিতে শসা বিক্রি হয়। প্রকারভেদে ছোট বস্তার শসা বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং বড় বস্তার শসা বিক্রি হয় ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। এ হাটটি ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এপ্রিল মাস পর্যন্ত চলে বলেও জানান তিনি।
ব্যবসায়ী মো. আলাউদ্দিন শেখ ও রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাড়াশ অঞ্চলের উৎপাদিত শসার মান ভালো ও তুলনামূলক দামও কম। মান ভালো হওয়ায় এর কদর রয়েছে সারাদেশে। ঢাকার কারওয়ান বাজার, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখানকার উৎপাদিত শসার চাহিদা রয়েছে।
তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের নামাসিলোট গ্রামের শসা চাষি মো. রায়হান আলী ঢাকা পোস্টকে জানান, প্রতি বিঘা জমিতে শসার আবাদ করতে তার ১২-১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। বিঘা প্রতি শসা বিক্রি করছেন ৩০-৩৫ হাজার টাকা।
উল্লাপাড়ার নজরুল ইসলাম ও জালাল উদ্দিনসহ একাধিক কৃষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে অনেক জমি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন এলাকায় শসা চাষের জন্য জমি লিজ পাওয়া যায় না। ভালো লাভ পাওয়ায় চাষিরা শসা চাষে ঝুঁকছে বেশি। আর যাদের নিজস্ব জমি আছে তারা আরও বেশি লাভবান হচ্ছেন।
শসা চাষে অল্প সময়ে এবং স্বল্প বিনিয়োগে বেশি লাভ করা যায়। দেশীয় উফশী ও হাইব্রিড দুই জাতের শসা চাষ হয়েছে। জেলায় এ বছর ৬৮০ হেক্টর জমিতে শসা চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে তাড়াশ উপজেলায়। শসা চাষে কৃষকরা ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। কৃষকেরা বিঘা প্রতি খরচ বাদে ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভ করছেন। এতে আগামীতে কৃষকরা শসা চাষে আরও উদ্যোগী হবে।
আবু হানিফ, উপপরিচালক, সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর
এসপি