'শব্দদূষণে মানুষের শ্রবণ ক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হতে পারে'
খুলনায় আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘সুরক্ষিত শ্রবণ, সুরক্ষিত জীবন’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে বুধবার (২৬ এপ্রিল) খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, শব্দদূষণ হ্রাস করা মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত উচ্চশব্দের মধ্যে থাকা ব্যক্তিরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন। বিদ্যালয়, হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকার রাস্তায় যান চলাচলের ক্ষেত্রে যানবাহনে হর্ণের ব্যবহার যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। একই সঙ্গে যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহার বন্ধে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে এক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ জরুরি।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, শব্দদূষণের ফলে মানুষের শ্রবণ শক্তি হ্রাস ও শ্রবণ ক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হতে পারে। এছাড়া হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, মানসিক চাপ, শ্রবণশক্তি হ্রাস, শিশুর মেধা বিকাশ ব্যাহত হওয়াসহ নানা রোগের কারণ এই শব্দদূষণ। এ দূষণরোধে যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ণের ব্যবহার, অযথা হর্ণ বাজানো, নির্মাণ কাজে উচ্চশব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার, যত্রতত্র লাউড স্পিকার ব্যবহার বন্ধ বা হ্রাস করা প্রয়োজন। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, বাংলাদেশে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী হর্ণ ব্যবহার নিষিদ্ধ। আবাসিক এলাকার পাঁচশ মিটারের মধ্যে শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতি দৈনিক সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টা ব্যবহার করা যাবে। তবে রাত ১০টার পর এ ধরণের যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নির্মাণকাজে শব্দদূষণকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের ২০১৭ সালের জরিপে দেখা যায়, খুলনার শহরাঞ্চলে উৎপন্ন শব্দের তীব্রতা ৪২ থেকে ১৩২ ডেসিবল। পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় বিভাগের ১০ জেলায় ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত শব্দ দূষণরোধে ১১৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৩৪৩টি মামলার মাধ্যমে ৪ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় এবং ৬৬৪টি হাইড্রোলিক হর্ণ জব্দ করেছে।
বিজ্ঞাপন
খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ইকবাল হোসেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মনিরা সুলতানা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. সালমা বেগম, সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) মহাসীন আল মুরাদ ও খুলনা সদর হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. কাজী আবু রাশেদ। পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এর আগে দিবসটি উপলক্ষ্যে নগরীর শহিদ হাদিস পার্কে মানববন্ধন এবং পরে বর্ণাঢ্য র্যালি শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে এসে শেষ হয়। র্যালিতে সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন।
মোহাম্মদ মিলন/আরকে