সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে যাত্রীবাহী যানবাহন কম চলাচল করলেও যাত্রীর ব্যাপক চাপ রয়েছে বাসস্ট্যান্ডগুলোতে। বাধ্য হয়ে নিম্ন আয়ের মানুষেরা বাস, ট্রাক, পিকআপ ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলযোগে গন্তব্যের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিয়েছেন। এতে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নারী যাত্রীরা। অনেককে আবার বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

বুধবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল গোলচত্বর ও কড্ডার মোড় ঢাকামুখী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়। এই সুযোগে পরিবহনগুলো ভাড়া দাবি করছে ইচ্ছেমতো। 

সরেজমিনে বিকেল ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত কড্ডার মোড় এলাকায় দেখা যায়, ঢাকাগামী যাত্রীর ব্যাপক চাপ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাগ ও লাগেজ নিয়ে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছেন শত শত মানুষ। কড্ডা থেকে ছেড়ে যাওয়া কিছু বাস, ট্রাক, পিকআপ ও উত্তরবঙ্গের কয়েক জেলা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী কিছু লোকাল বাসই তাদের ভরসা। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। ভাড়া নিচ্ছেন ইচ্ছেমতো। যার ফলে অনেকেই যেতে পারছেন না।

বাসস্ট্যান্ডগুলোতে দেখা যায় লোকাল বাস এলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। লোকাল বাসগুলোতে স্বাভাবিক সময়ে যে ভাড়া ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা এখন সেই ভাড়া দ্বিগুণ দাবি করছে। আবার 'উঠলেই চারশ, দাঁড়ায়ে গেলে দুইশ' বলে যাত্রীদের ডাকছেন কোনো কোনো বাসের স্টাফ।

জামিলা আক্তার নামে সিরাজগঞ্জের এক গার্মেন্টসকর্মী কাজ করেন ঢাকা আশুলিয়ায়। পরিবার নিয়ে ঈদ করতে এসেছিলেন বাড়িতে। ফেরার পথে পাচ্ছেন না যানবাহন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুপুরে খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে কড্ডার মোড়ে এসেছি। এখন পর্যন্ত বাসে উঠতে পারলাম না। বাসের তুলনায় যাত্রী অনেক বেশি। মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। ভাড়াও চাইছে বেশি। ৪০০-৫০০ টাকা ভাড়া চায়। এখন চিন্তা করছি যেকোনো বাসে বেশি ভাড়া দিয়েই যেতে হবে।

রংপুর থেকে ঢাকাগামী আরকে ট্রাভেলসের সুপারভাইজার সেরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই কয়েকদিন তেমন কোনো যাত্রী হয়নি। আজ থেকে একটু যাত্রীর চাপ আছে। সে তুলনায় মহাসড়কে গাড়ি কম। সবকিছুর দাম বেশি, এই কয়েকদিনই আমাদের ব্যবসা। আমরা ২০০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়ায় যাত্রী তুলছি। এর মাঝে আবার দু-একজন কমও দিচ্ছে। 

কড্ডা থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত ট্রাক-পিকআপে যেতে ভাড়া গুণতে হচ্ছে আড়াইশ টাকা। তবুও চালকদের কদর যেন তুঙ্গে। মিলন নামে এক পিকআপ চালক বলেন, পুলিশ সাধারণত পিকআপে যাত্রী তুলতে দেয় না। মানুষ যেমন বাধ্য হয়ে ওঠে, আমরাও তেমনই কয়েকটা টাকার জন্য তুলি। আমরা এভাবে যাত্রী নিয়ে চন্দ্রা পর্যন্ত যেতে পারি। তার বেশি যেতে দেয় না। ভাড়া নিচ্ছি একদাম আড়াইশ। 

অনেকেই আবার মোটরসাইকেল যোগে চন্দ্রা পর্যন্ত যাচ্ছেন। আলাউদ্দিন ও বকুল নামে দুই ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের চালক ঢাকা পোস্টকে বলেন, একজন বা দুজন যাত্রী নিয়ে আমরা চন্দ্রা পর্যন্ত যাই। ভাড়া নেই ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা। তবে তারা জানান, এমন ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের সংখ্যাও অনেক। 

তবে সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে যানবাহনের তেমন চাপ নেই। বাসস্ট্যান্ড ছাড়া মহাসড়ক যেন এখনো অনেকটা নিরব। কিছু মানুষ ও যানবাহন চলাচল করলেও তুলনায় খুবই কম। বেশিরভাগ সময়ই ফাঁকা পড়ে থাকছে মহাসড়ক। তবে মহাসড়কে বেশি চলাচল করছে ব্যক্তিগত গাড়ি। 

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদের পরে এখনো মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়েনি। মহাসড়কে এই মুহুর্তে তুলনামূলক ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি চলছে। তবে ঢাকাগামী বাসস্ট্যান্ডে অনেক যাত্রী রয়েছে। 

সিরাজগঞ্জের ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) সালেকুজ্জামান খান সালেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিছু মানুষ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করলেও মহাসড়কে যানবাহন নেই বললেই চলে। খুবই সীমিত পরিমাণ যানবাহন চলাচল করছে। বেশিরভাগ সময়ই ফাঁকা থাকছে মহাসড়ক। তবে ধারণা করা হচ্ছে শুক্র-শনিবার থেকে যান চলাচল বাড়তে পারে। 

তিনি বলেন, কড্ডা বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের ব্যাপক চাপ রয়েছে, সেই তুলনায় গাড়ি কম। উত্তরবঙ্গের ঘরে ফেরা মানুষের এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হয়েছে। ঘরে ফেরা মানুষের মতোই কর্মস্থলে ফেরা মানুষেরও ভোগান্তি যেন না হয় ও তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা ট্রাফিক বিভাগ ও জেলা পুলিশ এখনো সর্বোচ্চ সচেষ্ট রয়েছে।

প্রসঙ্গত, এবারের ঈদযাত্রা ও ঈদ পরবর্তী যাত্রা যানজটমুক্ত ও মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে জেলা পুলিশ, জেলা ট্রাফিক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায় ৮০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যানজট সৃষ্টিকারী পার্শ্ব রাস্তাগুলো বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো মেরামত করা হয়েছে। ঈদ পরবর্তী যাত্রাও নির্বিঘ্ন করতে সিরাজগঞ্জের ৪৫ কিলোমিটার মহাসড়কে এখনো নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে জেলা পুলিশ, জেলা ট্রাফিক বিভাগ ও হাইওয়ে থানা পুলিশ। 

শুভ কুমার ঘোষ/আরকে