রংপুরের কাউনিয়ায় আওয়ামী লীগের কর্মী সোনা মিয়াকে (৫৫) পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুলের মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান।

তার অভিযোগ, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুলের নামে স্লোগান না দেওয়ায় তার অনুসারী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ও হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা রাজু আহমেদ পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের কর্মী সোনা মিয়াকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

বুধবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে রংপুর নগরীর সুমি কমিউনিটি সেন্টারে কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়।

লিখিত বক্তব্যে কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান বলেন, পদবঞ্চিত, নামধারী ও বিতর্কিত আওয়ামী লীগের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ও তার বড় ভাই হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা রাজু আহমেদ কাউনিয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে বাধাগ্রস্ত ও নেতৃত্বশূন্য করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। গত ১১ মার্চ তাদের নেতৃত্বে একদল উচ্ছৃঙ্খল সন্ত্রাসী কুর্শা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে হামলা করে।

তিনি আরও বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুলের মদদে আব্দুর রাজ্জাক ও তার বড় ভাই রাজু আহমেদের নেতৃত্বে কাউনিয়ায় সার্বিক পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ এপ্রিল অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে স্লোগান দেওয়া নিয়ে সোনা মিয়া নামে দলের এক কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করে আব্দুর রাজ্জাক ও রাজু আহমেদসহ তাদের লোকজন। ওই দিন হারাগাছের খানসামা ঈমামগঞ্জ স্কুল মাঠে  ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আসেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সেখানে জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুলের নাম বাদ দিয়ে শুধু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম মায়ার নামে স্লোগান দেওয়ায় আব্দুর রাজ্জাকের সমর্থকরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লে অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়। সেদিন সন্ধ্যায় ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোনা মিয়াকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে আব্দুর রাজ্জাক ও রাজু আহমেদের সমর্থকরা।

এই হত্যাকাণ্ডসহ দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুলের মদদ রয়েছে অভিযোগ করে দলীয় কর্মী সোনা মিয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীন, আশরাফুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক জমসের আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, হারাগাছ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াছিন আলী প্রমুখ।

অভিযুক্ত কাউনিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ও তার বড় ভাই হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে দুজনের নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়। তাই এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।

অন্যদিকে দলীয় কর্মীকে হত্যাসহ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মদদ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুল বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এটি ষড়যন্ত্র এবং দুঃখজনক।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বুধবার দুপুর ২টার দিকে সোনা মিয়ার বড় ছেলে আখতারুজ্জামান বাদী হয়ে কাউনিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ও হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদসহ ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করে কাউনিয়া থানায় মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

কাউনিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুন্তাছের বিল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এই মামলায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মফু সালাম (৪৮), সাবেক সদস্য মোজাম্মেল হক (৫৫), কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান (৪৫), মাইদুল ইসলাম (৫০) ও আওয়ামী লীগের কর্মী আবদুল গফফার (৪৫)।

গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করা হয়। পরে বুধবার দুপুরে মামলা রেকর্ড হওয়ার পর তাদেরকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে হারাগাছে কাউনিয়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করতে উপজেলার খানসামারহাটের ইমামগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে যান বাণিজ্যমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য টিপু মুনশি। মন্ত্রী মাঠে এলে নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাকের বিবদমান দুটি গ্রুপের মধ্যে স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মতবিনিময় সভা না করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি চলে যান।

এরপর রাত ৮টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সোনা মিয়া নিহত হন। সোনা মিয়া উপজেলার হারাগাছের নাজিরদহ এলাকার মৃত আবদুল খালেকের ছেলে। তিনি হারাগাছ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এবং কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়ার অনুসারী বলে জানা যায়।

এর আগে কাউনিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক ও হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ