গত কয়েক সপ্তাহের তীব্র তাপদাহে গাছ থেকে ঝরে পড়েছে আম। উপায় না পেয়ে গাছের গোড়ায় সেচের পানি দিতে গিয়ে বাড়তি খরচ হয়েছে অনেক কৃষকের। তীব্র খরায় পানির স্তর নেমে যাওয়ায় আরও বিপাকে পড়েন আম, ধান, কলাসহ বিভিন্ন ফসল চাষিরা। তাই গত কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির জন্য ইসতেসকার নামাজ আদায় করেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

অবশেষে বুধবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল ৪টা থেকে জেলাজুড়ে প্রবল বৃষ্টি হয়। তবে ঘণ্টাব্যাপী এই বৃষ্টির সঙ্গে বিভিন্নস্থানে হয়েছে শিলাবৃষ্টিও। এতে আম ছাড়াও ধান, কলাসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলাজুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টির খবর পাওয়া গেলেও শিলাবৃষ্টি হয়েছে বেশ কিছু এলাকায়। নাচোল, ভোলাহাট ও ভারতীয় সীমান্তবর্তী সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও শিবগঞ্জের পাঁকা ইউনিয়নে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 

সদর উপজেলার নারায়নপুরের ধান চাষি তরিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকার ৭ বিঘা জমিতে ধান ছিল। আধা ঘণ্টার শিলাবৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে। গাছে থাকা সব ধান ঝরে পড়েছে। লাখ টাকার উপরে ধার করে ধান চাষ করেছিলাম। এখন জমি থেকে কিছুই পাব না। জমিতে শুধু ধানগাছ পড়ে রয়েছে। অথচ এক সপ্তাহের মধ্যেই ফসল কেটে ঘরে তুলতাম। এখন নিঃস্ব হয়ে গেলাম। 

শিবগঞ্জের পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁকা গ্রামের কৃষক মাজেদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃষ্টির মতো করে মুষলধারে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ৪ বিঘা কলা ও আড়াই বিঘা ধানের উপর দিয়ে বয়ে গেছে বৃষ্টি। সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। শুধু আমার নয়, দিয়াড় অঞ্চলের সব জমিতে এমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব জমির ধান মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। সেখান থেকে কোনো ফসল ঘরে তুলতে পারব না।

নাচোল উপজেলার নেজামপুর এলাকার কৃষক আশরাফ আলী জানান, আমার জমিতে পাঁকা ধান ছিল। ছোট ছোট শিলাবৃষ্টিতে ধান ঝরে পড়েছে। আধা ঘণ্টার শিলাবৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে। 

সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের নশিপুর গ্রামের আম চাষি মোজাম্মেল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু শিলাবৃষ্টি হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ এই বৃষ্টি আমের জন্য খুবই উপকারে আসবে। আমের ঝরে পড়া বন্ধ হব এবং দ্রুত বাড়বে। তবে নাচোল, ভোলাহাট উপজেলায় শিলাবৃষ্টির কথা শোনা গেছে। এতে আমের জন্য ব্যাপক ক্ষতি হবে। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. পলাশ সরকার, জেলাজুড়ে বৃষ্টির সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছ। তবে এতে ফসলের কত পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। আমাদের প্রতিনিধিরা মাঠে রিপোর্ট সংগ্রহ করছেন। তাদের দেওয়া তথ্য হাতে পেলে বিস্তারিত ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে। 

উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি বছর ৩৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ বছর আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। গতবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে কৃষি বিভাগ জেলায় আম উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। 

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি বছর ৫১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বেরো ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। এর বিপরীতে চলতি মৌসুমে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯৭২ মেট্রিন টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। 

মো. জাহাঙ্গীর আলম/আরকে