খুলনাঞ্চলে চাহিদার তুলনায় খাবার পানি অপ্রতুল। খাবার পানির সংকটের পাশাপাশি ফসলের জন্য সেচের পানি পেতে খুব কষ্ট করতে হয়। পানির লেয়ার দিন দিন নিচে নেমে আসছে। পুকুরগুলোও এখন প্রভাবশালীদের দখলে। এছাড়া খালের পানি এখন কৃষকদের কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে। এখন পানি নিয়ে একত্রে কাজ করতে পারলে উপকূল বাঁচানো সম্ভব হবে। একই সঙ্গে পানির সঠিক মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। সীমিত পানির উপযুক্ত ব্যবহার করতে হবে। 

সোমবার (২২ মার্চ) বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
   
অ্যাওসেড, খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও উপকূলীয় পানি সম্মেলন কমিটির যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেযর তালুকদার আব্দুল খালেক।

সভায় পাইকগাছা উপজেলার হিতামপুর গ্রামের কাকলি রানী বিশ্বাস বলেন, গ্রামে নোনা পানি। খাবার পানির খুব অভাব। দূর থেকে পানি আনতে হয়। খাবার পানির জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়। এছাড়া পানি কিনেও খেতে হয়।

ভুক্তভোগী শেফালী বিশ্বাস ও নুরুন্নাহার পারভীন বলেন, খাবার ও গোসলের পানির খুবই সংকট। সবজি লাগাতে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। পানির লেয়ার দিন দিন নিচে নেমে আসছে। পানিতে লবণাক্ততার কারণে চর্মরোগ হচ্ছে। এমনকি মাথার চুলও পড়ে যাচ্ছে।

পাইকগাছা উপজেলার ভিসিআরপিসি মাহমুদকাটির সভাপতি মানিক ভদ্র বলেন, চাহিদার তুলনায় খাবার পানি অপ্রতুল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগ ও পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।

খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটা ও কয়রার মানুষ এখনও পানি কিনে খাচ্ছে। কয়রার মানুষ তিন ধরনের পানি ব্যবহার করে। খাবার পানি, গোসলের পানি এবং হাত দোয়ার জন্য পৃথকভাবে পানি ব্যবহার করে তারা। পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। একই সঙ্গে পানির মূল্যায়ন করতে হবে। সীমিত পানির উপযুক্ত ব্যবহার করতে হবে।

কাজী জাভেদ খালীদ জয়, আইআরভির সমন্বয়কারী

কোস্টাল ভয়েস অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক কৌশিক দে বাপী বলেন, পানির লেয়ার দিন দিন নিচে নামছে। সুপেয় পানির জন্য খুলনায় প্রথমে টিউবওয়েল ব্যবহার করা হতো। পরবর্তীতে ডিপটিউবওয়েল ব্যবহার করা হয়। এরপর সাবমার্সেবল বসানো হচ্ছে। তবে তার সঠিক পরিসংখ্যান কোথাও নেই। সুপেয় পানির জন্য পুকুরের পানির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেই পুকুরগুলোও এখন প্রভাবশালীদের দখলে। এছাড়া খালের পানি এখন কৃষকদের কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে। এখন পানি নিয়ে একত্রে কাজ করতে পারলে উপকূল বাঁচানো সম্ভব হবে।

অ্যাওসেড'র নির্বাহী পরিচালক শামীম আরফীনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা ওয়াসার ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ দেলোয়ারা বেগম, পানি অধিকার কমিটির সভাপতি রেহানা আখতার, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ববি। সভায় সভাপতিত্ব করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার দত্ত। 

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কুয়েটের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তফা সরোয়ার। তার উপস্থাপনায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের পানি সংকট কতটা তীব্র হতে পারে ও এর প্রভাবে এই অঞ্চলের মানুষের ভবিষ্যৎ কি হতে পারে তা তুলে ধরেন।

সভায় বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল দুর্যোগ প্রবণ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে আগামী দিনে এ অঞ্চলে দুর্যোগ আরও তীব্রতা নিয়ে এবং ঘন ঘন আঘাত হানবে। তার লক্ষণ ইতোমধ্যে আমরা টের পাচ্ছি। প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট কারণের যৌথ কারণে পানি সংকট উপকূলীয় অঞ্চলে নানা রূপে দেখা দেবে। লবণাক্ততা বৃদ্ধি, সাগরের জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে জোয়ারের তীব্রতা ও উচ্চতা বৃদ্ধি, ভূ-গর্ভস্থ জলে আর্সেনিক দূষণ, জলবদ্ধতা, মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি, জল ও মাটির দূষণ ইত্যাদি ক্রমেই এ অঞ্চলকে বসবাস অনুপযোগী করে তুলবে। এজন্য এ অঞ্চলের সকল উন্নয়ন পরিকল্পনায় উপরস্থ জলবায়ু পরিবর্তন এবং জল সংক্রান্ত উপাত্তসমূহ বিবেচনায় নেওয়া খুবই জরুরি।      

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন অ্যাওসেড‘র পরিচালক মাহবুবুর রহমান মোহন, সিডিপির সমন্বয়কারী ইকবাল হোসেন বিপ্লব, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শাহীন জামান পন ও বাঁকার সভাপতি মো: শাহবুদ্দিন মোড়ল।  

মো. মিলন/এমএএস