সরকারি জলমহাল দখল, মাছ চাষে বাধা
বড় বিলা,ছোট বিলা জলমহাল
ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষে ৭৬৫ বিঘার একটি সরকারি জলমহাল দখল করে চাষাবাদ করায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি ব্যাপক লেকসানে পড়েছে ৷ শুষ্ক মৌসুম আসলেই প্রতিবছর ২৫০ একরের জলমহাল হয়ে যায় চাষাবাদের জমি। দেখে বোঝার উপায় থাকেনা এখানে জলমহল বলে কিছু আছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের কাজিগ্রাম এলাকার বড় বিলা,ছোট বিলা জলমহালের বিষয়ে ইজারাদার সমবায় সমিতি ভূমি মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। চলতি শুষ্ক মৌসুমে বড় বিলা,ছোট বিলার যে মধ্যাংশে পানি থাকার কথা ছিলো, সেখানেও জোরপূর্বক চাষাবাদ করছে অবৈধ দখলকারীরা।
বিজ্ঞাপন
কাজিগ্রাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির দাবি, সরকার হয় বিল উদ্ধার করবেন না হয় ইজারা বাতিল করে দখলদারদের ছেড়ে দেন। অভিযোগ রয়েছে, কয়েকদফা তদন্তের নির্দেশ আসলেও উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মিজানুর রহমান রহস্যজনক নীরবতা পালন করছেন।
বড় বিলা,ছোট বিলা জলমহালের ইজারাদার সংগঠন কাজিগ্রাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির উপদেষ্টা সদস্য শরিফুল ইসলাম আনসারী বলেন, দেশীয় মাছ চাষের উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য সমবায় সমিতির অধীনে মন্ত্রণালয়ে ৬ বছরের জন্য আবেদন করলে বাংলা ১৪২৬ হতে ১৪২৯ সাল পর্যন্ত ৪ বছরের জন্য ইজারা দেয়। ইজারা নেয়ার প্রথম বছরে পানি ও মাছ সংরক্ষণে বিলে বাঁধ দিতে গেলে বাধা দেয় অবৈধ দখলকারীরা। ২ বছরে তাদের প্রায় ২ কোটি ২৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে বিলের কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ সরকার বাংলা ১৪২৮ সালের জন্য আবারো রাজস্ব আদায়ে চিঠি পাঠিয়েছে। তাদের দাবি রাজস্ব নিতে চাইলে জলমহল বুঝিয়ে দিতে হবে,অন্যথায় ইজারা বাতিল করে জামানতের টাকা ফেরত দিতে হবে।
কাজিগ্রাম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জসীম উদ্দিন জানান, ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে সকল প্রক্রিয়া মেনেই বড় বিলা,ছোট বিলা জলমহালটি ইজারা নেয়া হয়েছে। এরপরেও স্থানীয় প্রশাসন কোন রহস্যের কারনে অবৈধ দখলকারীদের কাছ থেকে জলমহালটি রক্ষা করতে পারছে না। স্থানীয় নেতা মজনু ও মান্নানের নেতৃত্বে বিল দখল করে চাষাবাদ হচ্ছে। অথচ আমরা বিপুল পরিমাণ রাজস্ব দিয়ে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়েও মাছ চাষ করতে পারছি না।
মৎস্যজীবী আব্দুল করিম বলেন, ইজারা নেওয়ার পর গত দুইবছর অবৈধ দখলকারীদের বিভিন্ন হয়রানির শিকার হয়েছি আমরা। দখলকারীরা ক্ষমতা দেখিয়ে চাষাবাদ করছে। বিলের পানি নামিয়ে দিচ্ছে। মাছ চাষ করতে দেওয়া হচ্ছেনা। আবার বর্ষা মৌসুমেও জোর করে মাছ তুলে নিচ্ছে।
সরকারি বিলে অবৈধভাবে চাষাবাদের কথা স্বীকার করে সাগর আলী বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকেনা, ফলে সরকারি জমি পড়ে থাকে। তাই মজনু ভাইয়ের নির্দেশে আমরা এই জমিতে চাষাবাদ করি। তাদের নামে ইজারা নেই বলেও স্বীকার করেন তিনি।
এবিষয়ে মো. মজনু বলেন, বিলের জমিতে চাষাবাদ করছি, এটি অবৈধ। কিন্তু সাধারণ খেটে খাওয়া কৃষকরাই এসব চাষাবাদ করছে। বিলের মাছ মেরে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও তিনি জানান,অন্য গ্রামের লোকজন এবছর বিলের মাছ জোর করে ধরে নিয়েছে। এমনকি চাষাবাদের স্বার্থেই বিলের পানি ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
গোমস্তাপুর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. মিজানুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে দখলের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করা হবে। দখলকারীদের সাথে নিজের যোগসাজশের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রাকৃতিক উপায়ে দেশীয় মাছ চাষাবাদ ও সংরক্ষণ করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও বর্ষা মৌসুমে বিলের চারদিকে বাঁধ দিয়ে পানি সংরক্ষণের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। জেলার সকল বিলের উন্নয়নে অধিক ছোট বিলগুলো ইজারা না দিয়ে উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে। যাতে শুষ্ক মৌসুমে কৃষকরা এবং বর্ষা মৌসুমে মৎস্যজীবীরা উন্মুক্তভাবে মাছ চাষ করতে পারেন।
জাহাঙ্গীর আলম/এমআইএইচ