উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ওপর হামলার ঘটনায় ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রাম প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে। শুক্রবার (৫ মে) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত গ্রাম ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। গ্রেপ্তার এড়াতে তারা গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিশ্চিন্তপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, গ্রামের কোনোও বাড়িতেই পুরুষ সদস্যরা উপস্থিত নেই। দু-একটি বাড়িতে নারীরা থাকলেও তারা বয়সে প্রবীণ। কিছু বাড়িতে শিশুদেরও দেখা গেছে। এসব শিশুদের কাছে তাদের বাবা-মা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলছে ‘আমরা কিছুই জানি না।’ বাড়িতে রান্নার কোনো আয়োজন নেই। জ্বলেনি চুলাও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই গ্রামে অন্তত ২৫০টি পরিবারের বসবাস করে। তবে গতকাল ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনার পর থেকে গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতেই কোনো লোক নেই। গ্রেপ্তার এড়াতে তারা বাড়িতে তালা দিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

গতকালের ঘটনায় আহত ওই গ্রামের বাসিন্দা আইরিন বেগমের (৪৬) বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে ৮ থেকে ৯ বছরের দুইজন শিশু ও একজন বৃদ্ধা রয়েছেন। ওই দুই শিশু জানায়- তারা এই বাড়িতে বেড়াতে এসেছে।

যে জমিটি নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি সেটি নিশ্চিন্তপুর গ্রামের চরপাড়া মহল্লায় মধুমতি নদীর কাছে অবস্থিত। প্রায় পাঁচ একর পরিমাণ ওই জমিতে পাট, কাঁচা মরিচ ও বেগুন আবাদ হয়। পাশাপাশি চাষ করা হয় পেপে। এ জমির শষ্য ও সবজি এলাকাবাসীর চাহিদা মেটাতে সহায়তা করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জমির ছোট ছোট পাট ও কাঁচা মরিচ ক্ষেতের ফসল কুপিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের তিনটি ঘর নির্মাণের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এ কাজের জন্য অন্তত আটটি পেপে গাছ কাটা হয়েছে।

তিন ফসলি এই জমিতেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে প্রশাসন

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই জমিতে স্থানীয়রা ৫০/৬০ বছর ধরে চাষাবাদ করে আসছেন। মরিচ, বেগুন, পাট, পেঁপে হয় উর্বর এই জমিতে। এজন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প ঠেকাতে এলাকাবাসী বৃহস্পতিবার দুপুরে মানববন্ধন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিকুর রহমান চৌধুরীর সেখানে গেলে প্রতিবাদ জানান এলাকাবাসী। এ সময় ইউএনওর সঙ্গে আসা আনসার সদস্যরা বিধবা আইরিন বেগমের (৪৬) মুখে শর্টগানের বাট দিয়ে আঘাত করেন। এতে তার নাক ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। এতে উত্তেজিত হয়ে ইউএনওর ওপর হামলা চালান তারা। এ সময় ইউএনওর গাড়ি চালক, দেহরক্ষী, কাজের ঠিকাদার, চার নারী, চার পুলিশ সদস্য ও এলাকাবাসীসহ মোট ১৫ জন আহত হন।

এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার (৫ মে) ভোর ছয়টা পর্যন্ত গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তবে এ ঘটনায় রাতে কাউকে আটক করা হয়নি।

মধুখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জড়িতদের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ পুলিশের কাছে রয়েছে। বেছে বেছে জড়িতদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা এ ঘটনায় জড়িত নন তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

জহির হোসেন/আরএআর