ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ : বাগেরহাটে প্রস্তুত ৪৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র
দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আরও উত্তর দিকে অগ্রসর এবং ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী রোববার (১৪ মে) দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় মোংলাসহ দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারি সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্নিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে জেলা প্রশাসন ও জেলার ৯টি উপজেলায় দূর্যোগ প্রস্তুতি কমিটির সভা হয়েছে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সভাপতিত্বে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় ত্রাণ প্রদানের জন্য ৫২২ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এর পাশাপাশি উপকূলবর্তী এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়ে ফসলের যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং উপজেলা কৃষি অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ও কোস্টগার্ডকে সক্রিয় থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা পর্যায়ে শুকনা খাবার ও স্যালাইন মজুদ রাখার জন্য সিভিল সার্জন, নির্বাহী প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য এবং ইউএনওদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মসজিদে ইমামদের মাধ্যমে মাইকিং করে ঝড়ের আগে, ঝড়ের সময় এবং ঝড়ের পরে করণীয় এবং উপকূলবর্তী প্রতিটি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে খোলা হচ্ছে কন্ট্রোলরুম। ঝড়ের আগে ধান কাটা, মাছ ধরা এবং মাছের ঘেরের পাড়-নীচু জমি নেট দিয়ে ঘিরে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যথাসময়ে গবাদি পশু আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবক এবং খামারিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় জেলার সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলায় ৪৪৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৯৭৫ জন আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবেন। জেলা সদর ও প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ৯টি উপজেলায় ৮৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কয়েকশত স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মোংলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা হারুন আর রশিদ বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি মোংলা বন্দর থেকে এক হাজার ২২০কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে এটি ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় রুপ নিয়েছে। মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারি সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
শেখ আবু তালেব/এবিএস