সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে আম নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তারা দ্রুত আম পেড়ে বাজারে তুলছেন। এতে বাজারে পর্যাপ্ত আমের সরবরাহ থাকলেও নেই ক্রেতা। বাধ্য হয়ে লোকসানে আম বিক্রি করছেন বিক্রোতারা। 

সাতক্ষীরা জেলার সবচেয়ে বড় আমের বাজার শহরের বড়বাজার। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড়বাজারে আম কিনতে আসেন ক্রেতারা। বড়বাজারে আমের পর্যাপ্ত যোগান থাকলেও তেমন ক্রেতা নেই। ফলে লোকসানে আম বিক্রি করছেন আমচাষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। আমের কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা। ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব পড়তে পারে এই শঙ্কায় দ্রুত আম পেড়ে বাজারে তুলছেন চাষিরা। 

সরেজমিনে সাতক্ষীরা বড়বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত আম উঠেছে। কেউবা ভ্যানে করে কেউবা ঝুড়িতে করে অলিতে গলিতে আম নিয়ে বসে আছেন। তবে ক্রেতা নেই। দু-একজন ক্রেতা আসলেও আমের যে দাম বলছেন তাতে হতাশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। 

সাতক্ষীরা বড় বাজারের কামরুল ইসলামসহ কয়েকজন বলেন, জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্তৃক ঘোষিত আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস বৈশাখীসহ স্থানীয় জাতের আম সংগ্রহের দিন ১২ মে। যে কারণে চাষিরা বাগানের আম পাড়তে পারেনি। কিন্তু হঠাৎ ওই তারিখ পরিবর্তন করে ৫ মে নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। ফলে বাজারে আমের সরবরাহ অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে আম নষ্ট হওয়ার শঙ্কা থাকায় আম পাড়ছেন চাষিরা। তাছাড়া গত বছরের তুলনায় এ বছর এখনো পর্যাপ্ত ক্রেতা আসেনি। বাজারের সব আড়তে আমে সয়লাব হয়ে গেছে। কোনো আড়তে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। প্রতিদিন হাজার হাজার মণ আম উঠছে সুলতানপুর বড়বাজারের আড়তে। যে কারণে ভালো দাম পাচ্ছেন না চাষি বা ব্যবসায়িরা। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে বাইরের ক্রেতারা সাতক্ষীরায় তেমন আসছে না।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভাদড়া গ্রামের ক্ষুদ্র আম ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে চলতি মৌসুমে আম বাগানগুলোতে সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে বড় বাজারে আম বিক্রি করতে এসেছি। তবে দাম শুনে মাথা ঘুরে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। গত মৌসুমে গোবিন্দভোগ ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা মণ বিক্রি করেছিলাম। তবে এ বছর আম ভেদে গোবিন্দভোগ আমের দাম বলছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। বাইরের পর্যাপ্ত ক্রেতা না আসায় আমের দাম অনেক কমে গেছে। বাগান কেনা, পরিচর্যা, শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মণ গোবিন্দভোগ আম উৎপাদন খরচ পড়েছে কমপক্ষে ২ হাজার টাকা। বাজারে এমন দাম গেলে এ বছর আমার কয়েক লাখ টাকা লোকসান হবে।

বড়বাজারের কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু বলেন, তীব্র গরমে কয়েক দিনের মধ্যে আম পেকেছে। তার মধ্যে ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা’, যে কারণে চাষিরা আম পেড়ে ফেলছেন। গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ আমের চাহিদা অনেক কম থাকায় জেলার বাইরের আম ব্যবসায়ীরা এখনো আসেননি। তবে হিমসাগর আম সংগ্রহ শুরু হলে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যাপ্ত আম ব্যবসায়ীরা বড়বাজারে আসবেন এবং আম ক্রয় করবেন। ফলে ক্ষুদ্র আমচাষিরা ও কৃষকরা লাভবান হবে বলে আমরা আশা করছি।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, এবার সাতক্ষীরা জেলায় চার হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে ৫ হাজার ২৯৯টি। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। ৫ মে প্রথম দফায় গোবিন্দ ভোগ, গোপাল ভোগসহ স্থানীয় জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। হিমসাগরের জন্য ১০ মে, ল্যাংড়ার জন্য ১৮ মে, আম্রপালি ২৮ মে থেকে পাড়ার দিন ধার্য করা হয়েছে।

আমের কাঙিক্ষত দাম না পাওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী- বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ১২ বা ১৩ মের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে চাষিরা অল্প সময়ের মধ্যে আম সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসছেন।

সোহাগ হোসেন/আরএআর