সন্তানের সুখের জন্য একাই লড়ছেন হালিমা
অল্প বয়সেই বিয়ে হওয়ায় পড়াশোনা করতে পারেননি। কিন্তু ছেলেমেয়ে যেন পড়াশোনা করে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সেজন্য জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। খামারের গরুর দুধ সংগ্রহ করে নিজেই বিক্রি করেন বাসা-বাড়িতে। বলছিলাম টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভার বিরামদী এলাকার ফরিদ মিয়ার স্ত্রী হালিমা বেগমের (৩২) কথা।
তখনও দুপুর গড়ায়নি। ব্যস্ত হালিমা তখন গরুর দুধ সংগ্রহ করছিলেন। একে একে ৬টি গরুর দুধ সংগ্রহ করার পর দুধ বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বিতরণ করা, গরুকে গোসল ও খাওয়ানো, খড় কাটা শেষে পরিবারের জন্য রান্নার কাজ করতে হয় তাকে। গরু লালন-পালনে তাকে সহযোগিতা করেন তার স্বামীও। এমন সফলতা ও জীবন সংগ্রামে গ্রামের অনেক নারীর কাছেই হালিমা এখন অনুপ্রেরণা।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামের আজহার মিয়ার মেয়ে হালিমা নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ২০০৫ সালে বিয়ে হয় একই উপজেলার বিরামদী গ্রামের মৃত আশরাফ আলীর ছেলে ফরিদ মিয়ার সঙ্গে। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে তিনি আর পড়াশোনা করতে পারেননি। হালিমা-ফরিদ দম্পতির ঘরে রয়েছে একটি ছেলে সন্তানও।
শুরুর দিকে বাবা এবং শ্বশুর বাড়ি থেকে কিছু টাকা সংগ্রহ করে একটি গরু কেনেন হালিমা। শপথ নেন হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যেও তার সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যাবেন। ধীরে ধীরে হালিমার খামারে গরুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। কঠোর পরিশ্রম ও হার না মানা হালিমার খামারে এখন হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের ১৩টি গরু এবং ৪টি ছাগল রয়েছে। হালিমার খামার থেকে বর্তমানে ২২-২৫ লিটার দুধ আসছে। স্বামী ফরিদ মিয়াও স্ত্রীর সফলতা দেখে তাকে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি কাজে সহযোগিতা করেন। তার সন্তানদের মধ্যে ছেলে হিমেল নবম শ্রেণীতে এবং মেয়ে তাফিয়া তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেশী শিরিন আখতার বলেন, জীবনে এমন পরিশ্রমী কোনো নারীকে দেখিনি। যে দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে সংসারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। হালিমা এখন গ্রামের একজন অনুসরণীয় মানুষ।
একই গ্রামের মায়া বেগম বলেন, প্রথমে তার স্বামী কিছুই করতো না। হালিমা একাই গরু লালন-পালন করতো। পরে যখন দেখে গরুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে তখন তার স্বামীও তার পরিশ্রম দেখে তাকে সহযোগিতা করা শুরু করে। একা নারী হয়ে সন্তানদের পড়াশোনা এবং সংসারের সকল কাজ একা করছেন তিনি। সে যেমন একজন সফল মা, তেমনি সংগ্রামী একজন নারী।
এ বিষয়ে হালিমা বলেন, মাধ্যমিকের গণ্ডি না পেরুতেই বিয়ে দিয়েছে পরিবার। বিয়ের পর স্বামী কিছুই করতো না। পরে বাবার বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির কিছু টাকা জমিয়ে একটা গরু কিনে লালন-পালন শুরু করি। সন্তানদের ভবিষ্যতের চিন্তা করে কঠোর পরিশ্রম করতে রাজি আছি। খামারে এখন ১৩টি গরু ও ৪টি ছাগল রয়েছে। এখন স্বামীও আমাকে সহযোগিতা করে। এতো পরিশ্রম সবই সন্তানদের জন্য। নিজে পড়তে না পারলেও সন্তানরা যেন পড়াশোনা করে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে এজন্য এতো সংগ্রাম। অনেকেই বলে কেন এতো পরিশ্রম করি।
হালিমার স্বামী ফরিদ মিয়া বলেন, হালিমার কারণেই সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। সেই সব কিছু করে, আমি শুধু তাকে উৎসাহ এবং কাজে সহযোগিতা করি। আর এসব কিছুই করা হচ্ছে আমাদের সন্তানদের জন্য।
অভিজিৎ ঘোষ/এবিএস