দৃষ্টিনন্দন পরী পালং খাট বানিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. নুরুন্নবী

খাগড়াছড়ির গুইমারায় সেগুন কাঠ দিয়ে কোটি টাকা মূল্যের দৃষ্টিনন্দন পরী পালং খাট বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মো. নুরুন্নবী নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা। দীর্ঘ তিন বছর দুই মাস একজন মিস্ত্রি দিয়ে ১৬ পরী বিশিষ্ট এই খাট বানিয়ে নিয়েছেন তিনি। এই খাট দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসে নুরুন্নবীর গুইমারা বিজিবি সেক্টরের পাশের বাসায় ভিড় করছে। 

মো. নুরুন্নবী গুইমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক। তিনি গত ৮-৯ বছর ধরে কাঠ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

খাটটি তৈরি করেছেন গুইমারা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা কাঠমিস্ত্রি মো. আবু বক্কর কাঞ্চন (৩৫)। তিনি দীর্ঘ সময়ের এই কাজের পারিশ্রমিক নিয়েছেন ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এটি তৈরি করতে কাঠ লেগেছে প্রায় ১০০ ফুট।

একজন মিস্ত্রি ১৬ পরী বিশিষ্ট এই খাট বানিয়েছেন

জানা গেছে, ২০১৭ সালে নুরুন্নবীর বাড়িতে পরী পালং খাটের কাজ শুরু হয়। খাটের কাজ শেষ হয় চলতি বছরের ১৬ মার্চ। চার কোণায় চারটি বড় পরী ও চারটি মাঝারি পরী এবং দুই পাশে আটটি ছোট পরী বানিয়ে খাটটি দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়েছে। বড় চারটি পরীর হাতে চারটি প্রজাপতিও বসানো হয়েছে। খাটটি বার্নিস করতে চারজন শ্রমিকের সময় লেগেছে এক মাস ১৯ দিন। বার্নিসে খরচ হয়েছে লাখ টাকার বেশি। 

খাটটির কোনো অনুমোদিত ক্যাটালগ নেই। সম্পূর্ণ নিজের মতো করে তৈরি করেছেন স্থানীয় কাঠমিস্ত্রি আবু বক্কর ছিদ্দিক কাঞ্চন। তার নিজের নকশায় পুরো খাটটি তৈরি করা হয়েছে। খাটটির চানি কাপড়ের মতো ভাঁজ করে রাখা যায়। 

খাটটির কাজ শেষ করতে দীর্ঘ তিন বছর দুই মাস সময় লেগেছে

কাঠমিস্ত্রি আবু বক্কর ছিদ্দিক কাঞ্চন ১৪ বছর বয়সে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় একটি ফার্নিচার দোকানে জোগালি হিসেবে কাজ শুরু করেন। চার বছরের মধ্যে মিস্ত্রি হয়ে যান। পরে তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাঙামাটিতে কাজ করেন। সর্বশেষ কুষ্টিয়া থেকে কাজ করে এসে গুইমারা বাজারে কাজ শুরু করেন। এরপর ২০১৭ সালে তিনি এই কাজের চুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করেন। তিন বছর দুই মাসে তিনি কাজ শেষ করেন। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে মাত্র ১৫-২০ দিন কাজ করেননি তিনি। 

পরী পালং খাটের মিস্ত্রি আবু বক্কর ছিদ্দিক কাঞ্চন ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন বছর আগে এই খাট বানানোর জন্য চুক্তিদ্ধ হই। সম্পূর্ণ নিজের ডিজাইনে এই খাট আমি বানিয়েছি। আমার সঙ্গে কোনো জোগালি ছিল না। তিন বছর দুই মাসে আমি কাজ শেষ করেছি। এই খাট বানাতে চুক্তি অনুসারে পারিশ্রমিক নিয়েছি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। খাটটি বানাতে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। খুব সন্তুষ্টির সঙ্গে আমি এই খাট বানিয়েছি।

এই কাজের জন্য  ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছেন মিস্ত্রি 

পরী পালং খাটের মালিক মো. নুরুন্নবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভিন্ন কিছু করার ভাবনা থেকেই ব্যতিক্রমী একটি খাট তৈরির চিন্তা করি। তিন বছর আগে কাঞ্চন মিস্ত্রির সঙ্গে কথাবার্তা শেষ করে সেগুন কাঠ সংগ্রহ করে কাজ শুরু করি। তিন বছর দুই মাস পর খাটটি পূর্ণতা লাভ করে। 

তিনি আরও বলেন, ঢাকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় নেওয়ার জন্যই এই খাটটি তৈরি করেছি। এটি তৈরি করতে ব্যয় হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। এক কোটি টাকা হলে খাটটি বিক্রি করবো। ইতোমধ্যে ঢাকার এক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা খাটটি ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন। খাটটি দেখতে স্থানীয়রা ছাড়াও ঢাকা থেকে কিছু সৌখিন ব্যক্তি তার বাড়িতে আসছেন। 

খাগড়াছড়ি থেকে খাট দেখতে আসা মো. গফুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, জীবনের প্রথম এমন খাট দেখলাম। অনেক সুন্দর একটি খাট। তাকালেই চোখ জুড়িয়ে আসে। এমন ডিজাইন করে খাট বানানোর মতো লোক আমাদের এলাকায় আছে নিজে না দেখলে বিশ্বাস হতো না।

গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাঠমিস্ত্রি কাঞ্চন মুসলিমপাড়ার ছেলে। সে তিন বছর আগে চুক্তির মাধ্যমে এই খাটের কাজ শুরু করে এই মাসে শেষ করেছে। তার যে এমন প্রতিভা আছে এই খাট না দেখলে জানতাম না। তার এই কাজ মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। আশা করি সে ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু আমাদেরকে বানিয়ে দেখাবে।

জাফর সবুজ/আরএআর