পাবনায় নদী ভাঙনে হুমকির মুখে পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশন
পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুরের পুরানভারেঙ্গা এলাকায় যমুনা নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে নদীপাড়ের বাসিন্দারা। সেই সঙ্গে হুমকির মুখে রয়েছে ওই এলাকায় অবস্থিত পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশন। যেটি যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে নদীগর্ভে। পল্লী বিদ্যুতের সাব স্টেশনটি নদীগর্ভে বিলীন হলে অন্ধকার নেমে আসবে ওই অঞ্চলে।
কাশিনাথপুর পল্লী বিদুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজলার নগরবাড়ি নৌবন্দর এলাকা থেকে তিন কিলোমিটার যমুনা নদীর মাটির নিচ দিয়ে ৪০ কাটি টাকা ব্যয়ে ৩৩০০০ কেভি জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের মধ্য দিয়ে চরাচঞ্চলের মানুষের বিদ্যুতের ব্যবস্থা হয়। ২০২১ সাল বেড়া ও মানিকগঞ্জ জেলার প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ পায়। চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবির পর বিদ্যুৎ পেয়ে উৎসবের আমেজ শুরু হয় ওই এলাকায়। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেই সময় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করে এলাকাবাসী। কিন্তু এখন নদী ভাঙনের কবলে হারাতে বসছে তাদের কাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ। নদী ভাঙনের ফলে সাব মেরিন কেবলের তার মাটির নিচ থেকে বের হয়ে এসেছে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরেণের দুর্ঘটনা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পল্লী বিদুৎ অফিস থেকে একাধিকবার বেড়া পানি উনয়ন বোর্ডকে (পাউবা) অবগত করেও এখন পর্যন্ত ভাঙন রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে অভিযাগ তাদের।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজলার চর কল্যাণপুর থেকে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলামিটার এলাকায় একমাস আগ থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় এ ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। নদীপাড়ের বাসিন্দারা তাদের উঠতি ফসল কেটে কেটে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
গত তিন বছর নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে কয়েক হাজার বিঘা ফসলী জমি ও ঘরবাড়ি। গত এক মাস প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি ও কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। এখন ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে পল্লী বিদ্যুতর সাব স্টেশন। যেটি ভাঙন থেকে মাত্র একশ গজ দূরে। সাবস্টেশন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সাইনবোর্ডও টানিয়ে দিয়েছে।
স্থানীয় কৃষক আবদুস সালাম জানায়, নদীর এই চর ভাঙনে তিনি তার বসতভিটাসহ প্রায় ১০ বিঘা জমি হারিয়েছেন। সব হারিয়ে তিনি নিঃস্ব। তিনি বলেন, আমার এই দুর্দিনে কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি। কারো কোনো সহযোগিতা পাইনি। চারবার এই নদী ভাঙনের কবলে পড়ে হারিয়েছি সবকিছু। আর হারাতে চাই না। আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা কিছু একটা করেন।
একই এলাকার কৃষক আব্দুল আউয়াল বলেন, সব মিলিয়ে প্রায় ১০ বার এই নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি। আমাকে শেষ করে দিয়েছে এই নদী। কোথায় গিয়ে ঘর তুলব? এই দুশ্চিন্তায় দিন কাটে। সবশেষে এইবার এখানে বাড়ি করেছি এটাও হয়তো আর ১০-১৫ দিন থাকবে। নদী ভাঙন হলে নদীতে ডুবে যাবে। সরকারের কাছে আকুল আবেদন নদীতে যেন জিও ব্যাগ ফেলে আমাদের রক্ষা করে।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল হোসেন জানায়, গত বছর আমাদের এই এলাকায় প্রায় ২৫০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তবে গতবারের তুলনায় এ বছর নদী ভাঙনের পরিমাণ একটু বেশি। এতে হুমকির মুখে রয়েছেন স্থানীয়রা। সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে রয়েছেন আমাদের এলাকায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পল্লী বিদ্যুতের সাব স্টেশন। আর ১০-১৫ দিন এভাবে নদী ভাঙন হলে সেটিও তলিয়ে যাবে নদীর মধ্যে। সেটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে দেশের কোটি টাকা নষ্ট হবে।
পলাশ হোসাইন নামের একজন জানায়, আমাদের এই এলাকায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার লোকজনের বসবাস। পল্লী বিদ্যুৎ এর সাব স্টেশনটি পানিতে তলিয়ে গেলে এই ৭০ থেকে ৮০ হাজার লোকজন আবার অন্ধকারে নেমে চলে আসবে।
আব্দুল আহাদ মিয়া নামের আরেকজন বলেন, আমাদের চরে হাজার হাজার বিঘা জমিতে উঠতি ফসল রয়েছে। যেটি এখনে কাটার উপযোগী হয়নি। কিন্তু নদী ভাঙনের জন্য দ্রুত সেগুলো কেটে ফেলানো হচ্ছে। আমরা মাত্র দেড় মাস হয়েছে চিনাবাদাম লাগিয়েছি। অনেক আশা ছিল বাদাম বিক্রি করে একটি ঘর উঠাব। সেটিও শেষ।
পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ ২-এর জেনারেল ম্যানেজার মজিবুল হক জানান, ৪০ কোটি টাকা পেয়ে নির্মাণ করা হয়েছে পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশন। সেটা বর্তমানে হুমকির মধ্যে রয়েছে।আমাদের পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে পানি উনয়ন বোর্ডকে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঁচবার চিঠি দওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাসিক সভাতেও আলাচনা করা হয়েছে। এছাড়াও পাবনা-১ ও পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্যরা ভাঙনরাধে ব্যবস্থা গ্রহণর জন্য পানি উনয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছেন । কী কারণে পানি উনয়ন বার্ড কোনো ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না এটা আমাদের বাধগম্য নয়। দ্রুত সময়ের মধ্য কল্যাণপুর খেয়াঘাট এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে না পারলে ওখানকার পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে এবং বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান।
তিনি আরও বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয় তাহলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে পল্লী বিদ্যুতের এই সাবস্টেশন। সেই সঙ্গে ১৩ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ হারাবে।
বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমরাও আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাবনা- ২ আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজ কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদী ভাঙন দেখা দেওয়াতে স্থানীয় বাসিন্দারা ঝুঁকিতে রয়েছে। তেমনি সেখানকার পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশনটিও হুমকির মধ্যে রয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে চাহিদা পত্র দেওয়া আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
রাকিব হাসনাত/আরকে