রামগঞ্জে গণকবর

মহান স্বাধীনতা দিবসের ৫০ বছর পূর্ণ হলেও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে এখনো যুদ্ধকালীন গণকবরগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি। হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের পর লাশগুলো যেসব স্থানে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে, সেসব স্থান সরকারিভাবে সংরক্ষণ করলে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে তরুণরা। তা না হলে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অজানা থেকে যাবে বলে মনে করছেন  সচেতন মহল।

মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা পৌরসভার রতনপুর এলাকার রামগঞ্জ সরকারি কলেজে ক্যাম্প স্থাপন করে। ওইসময় তারা শত শত মানুষকে ক্যাম্পে এনে গুলি করে হত্যা করেছিল। পরে কলেজের উত্তর পাশে রতনপুর এলাকার একটি ডোবায় ফেলে মাটিচাপা দেয়।

একদিন পর হানাদার বাহিনী রায়পুরের মীরগঞ্জ এলাকা থেকে ২০-২৫ জনকে ধরে এনে হত্যা করে। পরে লাশগুলো ওয়াপদা বেড়িবাঁধে মাটিচাপা দেয়। এসব স্থান সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন সময় দাবি করা হলেও ৫০ বছরেও তা করা হয়নি। ২৫ মার্চ দেশের অন্যান্য স্থানে গণহত্যা দিবসে স্মৃতিস্তম্ভ বা গণকবরে শ্রদ্ধা জানালেও রামগঞ্জে তা সম্ভব হচ্ছে না। রামগঞ্জে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।

রতনপুর এলাকার গণকবরের ওই জমির মালিক লিয়াকত হোসেন বলেন, শুনেছি জমিটি গণকবর হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে। এজন্য আমি জমিটি বিক্রিও করতে পারছি না। সরকারও জমিটি অধিগ্রহণ করছে না।

গণকবর

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক মো. সোহেল রানা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের সঙ্গেই আমাদের কথা হয়। এজন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। কিন্ত নতুন প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার জন্য এটি সংরক্ষণ করা দরকার। রামগঞ্জে গণকবরগুলো এখনো চিহ্নিত করা হয়নি। যুদ্ধের ইতিহাস আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে গণকবরগুলো সরকারিভাবে সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি।

মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন জানান, যুদ্ধের সময় শত শত মানুষকে হত্যা করে রতনপুর এলাকার ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়।পরে সেখানেই লাশগুলো মাটিচাপা দেওয়া হয়। প্রায় ৫ বছর আগে ওই ডোবার একাংশে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি যে অংশ এখনো খালি আছে, তা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম রুহুল আমিনের সঙ্গে এনিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, রতনপুর ও ওয়াপদা সড়কের পাশে  সরকারিভাবে ওই স্থানগুলোতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে স্বাধীনতার ইতিহাস আগামী প্রজন্মের কাছে অজানাই থেকে যাবে।

রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপ্তি চাকমা বলেন, বিষয়টি কেউ আমাকে অবহিত করেনি। যুদ্ধকালীন গণকবরগুলো সংরক্ষণে আমাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। খোঁজ নিয়ে গণকবরগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/ এমআইএইচ