লক্ষ্মীপুরে ডাকাতি করার সময় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর স্কুলছাত্রী স্মৃতি নাথ সীমাকে (১৩) হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. রাশেদকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

রোববার (২৮ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে র‍্যাব-১১ এর নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে শেরপুরের শ্রীবরদী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শনিবার (২৭ মে) রাত ২টার দিকে রাশেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাশেদ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ তালিবপুর গ্রামের নুরুল আমিনের ছেলে। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

র‍্যাব-১১ এর নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান বলেন, ২০১২ সালের ১৮ জুলাই সীমাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ঘটনার পরপরই আসামি রাশেদ বিদেশে পালিয়ে যায়। ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সীমা হত্যা মামলায় রাশেদসহ ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এদিকে রাশেদ দেশে ফিরলেও নিজ এলাকায় থাকেননি। মাসুদ আলম পরিচয়ে তিনি শেরপুরের শ্রীবরদী থানায় বসবাস করে আসছিলেন। ভুয়া পরিচয়ে প্রায় ১১ বছর তিনি লুকিয়ে ছিলেন। গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, সীমা হত্যা মামলার রায়ে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের হিরণ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন, লক্ষ্মীপুর সদরের দত্তপাড়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের নুর আলম প্রকাশ নুরু, নোয়াখালীর সুধারাম থানার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের হেদায়েত উল্যা হেদু, চাটখিল উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের নুরনবী, বেগমগঞ্জের দহরপাড়া গ্রামের মানিক, তালিবপুর গ্রামের নুরুল আমিনের ছেলে রাশেদ, রুদ্রপুর গ্রামের সুমন, একলাশপুর গ্রামের সোহেল ও সোনাইমুড়ির ধন্যপুর গ্রামের সাদ্দাম হোসেন প্রকাশ রুবেলকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এরমধ্যে তখন মানিক, রাশেদ, সুমন, সোহেল ও রুবেল পলাতক ছিলেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মঞ্জুরুল বাছিদ এ রায় দিয়েছিলেন। এ মামলায় আরও ১৫ আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। এর প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল ও দুইজনকে মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন দিয়ে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি বেঞ্চ শুনানি শেষে রায় দেয়। এতে আসামি আনোয়ার ও সোহেলকে মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

জানা যায়, সীমা চন্দ্রগঞ্জের প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। ঘটনার দিন রাতে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের বসুদুহিতা গ্রামে কৃষ্ণলাল দেবনাথের বাসায় ঢুকে মুখোশধারী ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে কাপড় দিয়ে বেধে ফেলে। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কৃষ্ণলাল, তার স্ত্রী গীতা রানি ও পুত্রবধূ মিনতী বালা দেবীকে জখম করে। ডাকাতরা সীমাকে একটি কক্ষে নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। তারা বাসা থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ ৮০ হাজার ৫০০ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। ডাকাতরা পালানোর পর তারা চিৎকার করলে এলাকার লোকজন এসে ধর্ষণের শিকার সীমা ও আহতদের উদ্ধার করে চন্দ্রগঞ্জ ন্যাশনাল হাসপাতাল ও পরে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৪টা ১৫ মিনিটে সীমা মারা যায়। এ ঘটনায় পরের দিন (১৯ জুলাই) সীমার দাদা কৃষ্ণলাল দেবনাথ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৪-১৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা করেন। তৎকালীন চন্দ্রগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. বিল্লাল হোসেন ২০১৩ সালের ২৫ মে আদালতে অভিযোগ (চার্জশিট) দাখিল করেন। এতে ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এমজেইউ