আগুনে ২০ বাড়িসহ ২২ বিঘা পানের বরজ ভস্মীভূত
পানের বরজে আগুন
ঝিনাইদহের তিন উপজেলায় পৃথক অগ্নিকাণ্ডে ২০টি বাড়ি ও ২২ বিঘা জমির পানের বরজ ভস্মীভূত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) বিকেলে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পানামি, হরিণাকুন্ডু উপজেলার দারিয়াপুর ও শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর গ্রামে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
সদর উপজেলার পানামি গ্রামের সোহাগ আলী ঢাকা পোস্টকে জানান, বিকেলে কাশেমের মেয়ে রুমি (১২) চুলায় রান্না করতে গেলে সেখান থেকে রান্নার জ্বালানি বাঁশ ফেটে ঘরে আগুন ধরে যায়। এরপর রান্না ঘরের আগুনের ফুলকি পাশের পানের বরজে পড়লে আগুন বিশাল আকার ধারণ করে। পরে ঝিনাইদহ ফায়ার সর্ভিসে খবর দিলে তারা আসার আগেই পুরো এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে গ্রামের সুরাপ, রিপন, আলাই, ইসরাফিল, জানসাব, কাশেম ও মাছেমের মোট সাতটি বাড়িসহ ধান, পাট, চাল, খেসারি, তিনটি ছাগল ও একটি গরু পুড়ে যায়। এছাড়াও বিপুল অধিকারী, লবো অধিকারী, সিরাজ মালিতা, মুকুল, বঙ্ক অধিকারীর ১০ বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন
ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিরের স্টেশন অফিসার সুমন আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফায়ার সার্ভিরের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। আগুনে সাতটি বাড়ি, তিনটি ছাগল একটি গরুসহ ১০ বিঘা জমির পানের বরজ ভস্মীভূত হয়েছে। সেখান থেকে কয়েক লাখ পোড়া টাকাও উদ্ধার করা হয়।
হরিণাকুন্ডু উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের কৃষক মিঠু মিয়া ঢাকা পোস্টকে জানান, বিকেলে দারিয়াপুর গ্রামের সাহেব আলী তার গমের জমির আগাছা পোড়ানোর জন্য জমিতে আগুন দেন। সেই আগুন তার নিজের পানের বরজে লাগে। সেখান থেকে তা মুহূর্তেই আশপাশের পানের বরজে ছড়িয়ে পড়ে। হরিণাকুন্ডু ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন নেভাতে নেভাতে ১২ বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
হরিণাকুন্ডু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাফিজ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৫ জন কৃষকের ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি অফিস থেকে সরাসরি সাহায্য করার কোনো প্রকল্প নেই। তবে আমরা পরবর্তীতে প্রণোদনা বা প্রশিক্ষণ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতা করব।
শৈলকুপা ফায়ার সার্ভিসের কর্মী রাকিবুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, দুপুর ১২টার দিকে আবাইপুর গ্রামে চুলার আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় তারা আগুন নিয়ন্ত্রণ আনেন। তবে ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই রান্নু বিশ্বাস, রেজাউল বিশ্বাস, মিঠু বিশ্বাস, গরিবুল্লাহ, সাকা শেখ ও জোৎসা খাতুনের বসতঘরসহ ১৩টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত রান্নু ও রেজাউল মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডে আমাদের ২৫-৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন আমরা রাতে কোথায় থাকবো, সন্তাদেরই বা কী খাওয়াবে?
ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে প্রাথমিকভাবে পাঁচ হাজার টাকাসহ কিছু শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অগ্নিকাণ্ডে হরিণাকুন্ডুর মান্দারতলা গ্রামের ৩০ বিঘা ও ৪ মার্চ একই উপজেলার মকিমপুর গ্রামের ১০ বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরএআর