অভিযুক্ত শিক্ষক হেদায়েতুল্লাহ

ফরিদপুরের মধুখালীতে এক মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে আট বছরের শিশু শিক্ষার্থীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করেছে। সোমবার (২৯ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার মধুখালী পৌরসভার পূর্ব গাড়াখোলা মোহাম্মদিয়া আছিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত ওই মাদরাসা শিক্ষকের নাম মো. হেদায়েতুল্লাহ (২৬)। তিনি নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলার পীরের চর গ্রামের বাসিন্দা ও ফরিদপুরের পূর্ব গাড়াখোলা মোহাম্মদিয়া আছিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় গত ১৪ দিন আগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান।

নিহত শিক্ষার্থীর নাম ইমান আলী (৮)। সে মধুখালির নওপাড়া ইউনিয়নের সমশকান্দি গ্রামের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রী হৃদয় মোল্লার ছেলে।

মধুখালী রেলস্টেশনের কাছে পূর্ব গাড়াখোলা মহল্লায় ৩০ শতাংশ জমির উপর ১৯৯০ সালে মোহাম্মদিয়া আছিয়া মাদরাসা ও এতিমখানাটি স্থাপিত হয়। এ মাদরাসায় তিনজন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৩ জন। এখানে আবাসিক ও অনাবাসিক দুই ধরণের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেন। নিহত ইমান অনাবাসিক ছাত্র ছিল। সে বাড়ি থেকে যাতায়ত করত। প্রতিদিন ফজরের সময় তার নানী তাকে মাদরাসায় দিয়ে যেতেন এবং বিকেলে নিয়ে যেতেন।

মাদরাসার অন্য শিক্ষার্থীরা জানায়, মো. হেদায়েতুল্লাহ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কারণে অকারণে মারপিট ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করতেন। তার এ ধরণের আচরণের কথা শিশুদের পরিবারে জানাজানি হয়ে যায়। বিষয়টি মাদরাসার মুহতামিম ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের জানানো হয়। এ প্রেক্ষাপটে সোমবার (২৯ মে) ওই শিক্ষককে চূড়ান্তভাবে বিদায় করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্যবস্থাপনা পরিষদ।

ওই মাদরাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সালাম মিয়া বলেন, শিশু ইমান আলী ওই শিক্ষকের মারপিট ও আপত্তিকর আচরণের বিষয় ফাঁস করে দিয়ে থাকতে পারে- এমন রাগের বশবর্তী হয়ে হেদায়েতউল্লা সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাক-মুখ চেপে ধরে শিশু ইমানকে হত্যা করে। এ কাজে তাকে সাহায্য করেন মাদরাসার আরেক আবাসিক ছাত্র। ওই ছাত্রকে হত্যার ভয় দেখিয়ে এ কাজে সহায়তা করতে বাধ্য করেন ওই শিক্ষক। পরে হেদায়েতউল্লা হত্যায় সাহায্যকারী ওই শিশুটিকে নিয়ে বাসে উঠে ফরিদপুরের দিকে চলে যান। মাদরাসার অপর শিশুদের কাছ থেকে মুহূর্তেই এ খবর ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে মাদরাসার আরেক শিক্ষক মোটরসাইকেল নিয়ে মাঝকান্দি এলাকায় বাসটি থামিয়ে হেদায়েতউল্লা ও ওই শিশুটিকে আটক করে পুলিশে খবর দেন।

ওই মাদরাসার মুহতামিম শামসুল হক বলেন, হেদায়েতউল্লাহকে ১৪ দিন আগে মাদরাসায় কারি হিসেবে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে শিশুদের মারপিট ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করার অভিযোগ ওঠে। এজন্য তাকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। তাতেও কাজ না হওয়ায় তাকে চাকুরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
 
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মধুখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে মধুখালী থানার পুলিশ ওই মাদরাসা শিক্ষক এবং সঙ্গে নিয়ে যাওয়া শিশুটিকে থানায় নিয়ে আসে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিক্ষক হেদায়েতউল্লাহ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। শিশু শিক্ষার্থীর মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, হত্যা ছাড়াও ওই মাদরাসার আরেকটি শিশুকে বলাৎকারের অভিযোগ রয়েছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সে ব্যাপারেও আইনহত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

জহির হোসেন/আরকে