বিদ্যালয়ের পাশে সার্কাস, পাঠদান ব্যাহত
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের পল্লীমারী উচ্চ বিদ্যালয় ও পল্লীমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে স্থানীয় মাঠে চলছে ‘দি সোনার বাংলা সার্কাস’ প্রদর্শনী। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাতসহ স্থানীয়রা নানা ধরনের ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এলাকাবাসী ও শিক্ষকরা জানান, ১ জুন (বৃহস্পতিবার) থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে মধ্য-বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। সার্কাস চলার কারণে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হবে।
বিজ্ঞাপন
উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্র জানায়, বিনোদনের জন্য হারাগাছ ইউনিয়নের পল্লীমারী বাজারের পাশে দি সোনার বাংলা সার্কাসের প্রদর্শনীর অনুমোদন দিয়েছে জেলা প্রশাসক। ওই এলাকার পল্লীমারী জীবনগড়ি সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির পক্ষে সভাপতি সার্কাসের আয়োজক জাহাঙ্গীর আলমকে সার্কাসের প্রদর্শনীর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২৬ মে থেকে আগামী ৯ জুন পর্যন্ত ১৫ দিনব্যাপী সার্কাস প্রদর্শনী চলবে। তবে রাত ৮টার মধ্যে সার্কাসের প্রদর্শনী সমাপ্ত করতে হবে। এছাড়া সার্কাসে অশ্লীল নৃত্য, জুয়া, লটারি, আতশবাজি, মাদকদ্রব্য বেচাকেনা ও সেবনসহ অসামাজিক কার্যকলাপ এবং আইন ও সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ড করা যাবে না বলে শর্ত দেওয়া হয়েছে। শর্ত ব্যাহত হলে সার্কাসের প্রদর্শনী বন্ধ করা হবে।
বুধবার (৩১ মে) পল্লীমারী বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের পাশে স্থানীয় মাঠজুড়ে সার্কাসের প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। অনুমোদন শর্তে প্যান্ডেলে সিসি ক্যামেরার কথা বলা হলেও প্যান্ডেলে একটি সিসি ক্যামেরাও নেই। প্রতিদিন বিকেল ৩টা, সন্ধ্যা ৬টা ও রাত ৯টায় সার্কাস প্রদর্শনী চলছে। রাতের প্রদর্শনীতেও যুবকদের পাশাপাশি শিশুদের দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
আরও দেখা যায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুরে ক্লাস ছেড়ে সার্কাস প্যান্ডেলে যাচ্ছে। কথা হয় একতা উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা বলেন, এখানে সার্কাস এসেছে, দেখার জন্য প্যান্ডেলে যাচ্ছি।
পল্লীমারী গ্রামের বাসিন্দা আবুজার মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, সার্কাসে জুয়া না চললেও গানবাজনা হয়। বাদ্যযন্ত্রের শব্দ অনেক দূর পর্যন্ত যায়। এছাড়া সার্কাস উপলক্ষ্যে রাতে এই এলাকায় বহিরাগত লোকজনের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা কৃষক রহিম মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘হামরা কৃষক মানুষ। সারাদিন রোদের মধ্যে পরিশ্রম করি, কিন্তু মাইক আর বাদ্যযন্ত্রের শব্দে রাইতত ঘুমাতে পারি না। ছোট ছাওয়ারাও ঘুম থাকি কান্দি উঠে।’
পল্লীমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলে, রাতের বেলায় সার্কাস চলার কারণে আমাদের পড়াশুনায় সমস্যা হচ্ছে। সামনে পরীক্ষা, আমরা ঠিকমতো পড়াশুনা করতে পারছি না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একতা ও পল্লীমারী গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রচণ্ড গরমে যারা সার্কাস এনেছে তারা এলাকার প্রভাবশালী। তাদের ভয়ে কেউ এসবের প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।
পল্লীমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আশরাফুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশের মতো এ উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতেও মধ্য-বার্ষিকী পরীক্ষা শুরু হবে। এখানে দুইটি মাধ্যমিক ও দুইটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়ের পাশে সার্কাস শুরু হওয়ায় ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাবে। পাশাপাশি পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল হবে না।
একতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আলমগীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষার্থীরা বাড়িতে সন্ধ্যার পর পড়াশোনা করে। রাতে সার্কাস প্রদর্শনীর কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগ থাকবে না। তারা সার্কাস দেখতে যাবে। এতে করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত হচ্ছে। সামনে পরীক্ষায় তারা রেজাল্ট ভালো করতে পারবে না।
উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার আরিফ মাহফুজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে সার্কাস শুরুর বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এই মাত্র শুনলেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তাকে জানাননি। আয়োজকরা কীভাবে অনুমতি পেয়েছে তারাই ভালো বলতে পারবে।
এ বিষয়ে কাউনিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোন্তাছের বিল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত ৮টার মধ্যে সার্কাস প্রদর্শনী সমাপ্ত করতে আয়োজকদের কঠোরভাবে বলা হয়েছে। যদি তা না মানেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মনোনীতা দাস বলেন, কিছু সমস্যা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। কাউনিয়া থানা পুলিশের ওসিকে সার্বিক বিষয় দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ