রংপুরে চলছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিটি সেন্টারের নির্মাণকাজ। এটি হবে উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শপিং মল। কিন্তু জেলা পরিষদের বাস্তবায়নে ৩ একর জায়গাজুড়ে অত্যাধুনিক বিলাসবহুল ১৮ তলা বিশিষ্ট বাণিজ্যিক এই ভবনটির নির্মাণকাজ চলছে কচ্ছপের গতিতে। প্রায় এক দশক হতে চললেও নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, রংপুর নগরীর প্রাণকেন্দ্র জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটের কোলঘেঁষে নিজস্ব ৩ একরের বেশি জায়গাজুড়ে জেলা পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে এই অত্যাধুনিক বিলাসবহুল শপিংমল ‘জেলা পরিষদ সিটি সেন্টার’। শপিংমলের জন্য ১৮ তলা বিশিষ্ট বিপণি বিতান ও বাণিজ্যিক ভবনের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ফ্রেন্ডস ইন্টারন্যাশনাল ও জয়েন্ট ভ্যানচার খায়রুল কবির রানার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের আরজু ইসলামের তত্ত্বাবধানে এটি নির্মিত হচ্ছে।

৮৪ হাজার ১৩৫ দশমিক ৭৪ বর্গ ফুট আয়তনের এ মার্কেটে ২৩০টি কার ও ২৬টি মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের সুবিধা থাকছে। এছাড়া ৩টি গার্ডরুম, ২টি গার্ড বিশ্রাম রুম, ড্রাইভার ওয়েটিং রুম, একটি সুপারভাইজার রুম এবং ২টি জলধারা, ১০টি লিফট, ৪টি সিঁড়ি, গাড়ি ওঠানামার র‍্যাম্প ৫টি ও দুটি প্রবেশ/বাহির ও আউট ড্রপ-ইন ড্রপ থাকবে ২টি।

মার্কেটের নিচতলায় বাচ্চাদের/বড়দের তৈরি পোষাক ও মহাজনি দোকান ১০৬টি, দ্বিতীয় তলায় বড়দের গার্মেন্টস ও রেডিমেড/থান কাপড়/মহাজনি দোকান ১৩৫টি, তৃতীয় তলায় শাড়ি কাপড়/কসমেটিক্স ও লেদার সামগ্রীর দোকান ১৪৮টি, চতুর্থ তলায় মোবাইল/কম্পিউটার ও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর দোকান ১১৪টি, পঞ্চম তলায় খেলাধুলা/ক্রোকারিজ ও স্টেশনারি সামগ্রীর দোকান ১০৯টি, ৬ষ্ঠ তলায় স্বর্ণালঙ্কার/ফুডশপ/টিকিট কাউন্টার/ত্রিডি মুভি হল ও প্রজেক্টর/সিন কমপ্লেক্স /মিটিং রুম ও কনফারেন্স রুম ৫১টি।

সূত্র জানায়, চারটি লটে এই প্রকল্পে কাজের সমাপ্তি করা হবে। ইতোমধ্যে প্রথম লটের প্রায় সাড়ে ৪৫ কোটি, দ্বিতীয় লটে প্রায় সাড়ে ৩৫ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তৃতীয় লটের প্রায় সাড়ে ৩৮ কোটি টাকার কাজের ৮৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে। প্রথম ও দ্বিতীয় লটের কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।

একই ছাদের নিচে অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে উত্তরাঞ্চলের এই বৃহৎ সিটি সেন্টারটিতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে। সেই সঙ্গে রংপুরের উন্নয়নের চিত্র এর মাধ্যমে ফুটে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে নানা প্রতিবন্ধকতায় ধীরগতিতে চলছে সিটি সেন্টারটির নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে নির্মাণাধীন এই ভবনটির সামনে মিনি মার্কেটের জায়গাটি সরকারিভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় মামলা করে মিনি মার্কেট ব্যবসায়ীরা।

মিনি মার্কেট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তাদেরকে না জানিয়ে ভবনের কাজ শুরু করা হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে নথি চালাচালি হলেও ২০১৯ সালের দিকে ব্যবসায়ীদের জানানো হয় মিনি মার্কেট পরিত্যক্ত করা হয়েছে। ১৯৮০ সাল থেকে ব্যবসা পরিচালনা করে আসা এই মার্কেটের ৮০টির মতো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলা হয়েছে ইতোমধ্যে। নথি অনুযায়ী পুনর্বাসনের জন্য তাদের বরাদ্দকৃত দোকান দেওয়ার কথা থাকলেও অর্থ দিয়ে বাপ-দাদার বরাদ্দ নেওয়া জায়গার সমপরিমাণ মূল্য দিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে জেলা পরিষদ।

এমতাবস্থায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘ সময় ধরে মার্কেটের কাজ চলছে। অনেকে মার্কেটে দোকান বরাদ্দের অর্থ জমা দিয়ে ভবনের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, জেলা পরিষদ, প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও তাদের প্রতিনিধির যোগসাজশে একটি সিন্ডিকেট এই সিটি সেন্টারটি নিজেদের আয়ত্তে রেখে কালক্ষেপণ করে দোকান বিক্রির নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। খায়রুল কবীর রানার ঠিকাদারি লাইসেন্স দিয়ে কাজ করছেন আরজু ইসলাম। আরজু ইসলাম একাই ১০০ দোকান হাতিয়ে নিয়েছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র বলছেন। কিন্তু নানা অভিযোগ উঠলেও তা নিয়ে প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারের প্রতিনিধিরা কথা বলতে নারাজ।

এ বিষয়ে রংপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, মিনি মার্কেট ব্যবসায়ীদের কারণে সিটি সেন্টারের নির্মাণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এখন এটিই বড় সমস্যা, এছাড়া আমাদের অন্য কোনো সমস্যা নেই। এ স্থাপনার নির্মাণকাজ শেষ হলে অবহেলিত উত্তরাঞ্চলে মানুষের রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে। এছাড়া অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে, যাতে এ অঞ্চলের মানুষ খুব সহজেই সবকিছু পেতে পারে। আমি মনে করি রংপুরের উন্নয়নের চিত্র এর মাধ্যমে ফুটে উঠবে।

এমজেইউ